বিয়ের পর নবদম্পতির মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেওয়ায় দায় চাপানো হলো ঘটকের ওপর। লুঙ্গি উপহারের কথা বলে কৌশলে ডেকে এনে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে করা হলো মারধর।
Advertisement
এমনই ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সূত্রাপুর গোয়ালপাড়া গ্রামে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম মজিবর শেখ (৬৫)। তিনি শেরপুর উপজেলার ওমরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
মারধরের ঘটনায় বুধবার (১৮ জুন) শেরপুর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মজিবরের ছোট ভাই নজরুল শেখ। পুলিশ বলছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন এবং প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে।
Advertisement
স্থানীয় সূত্র ও পরিবার জানায়, গত ৯ জুন সূত্রাপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে (২১) শাজাহানপুর উপজেলার ঘাসুরিয়া গ্রামের যুবক মুন্নার (২৮) বিয়ে হয়। বিয়ের ঘটক ছিলেন ওমরপাড়ার মজিবর শেখ। বিয়ের পরদিনই নববধূকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান বর ও তার পরিবার। তবে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কনের পরিবার দাবি করে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের মেয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন এবং তাকে মেনে নিচ্ছেন না।
রোববার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় মজিবর শেখকে ‘ঘটকালির উপহার’ হিসেবে একটি লুঙ্গি দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে ডেকে নেন কনের পরিবারের সদস্যরা। এরপর গোয়ালপাড়া গ্রামের একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মারধর করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বাড়ি ফিরে মোবাইলে মজিবর শেখ বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় স্থানীয় সুঘাট বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে জহুরুল ইসলাম ও তার স্বজনরা আমাকে ডেকে বাড়িতে নিয়ে যায়। তারা অভিযোগ করে, বিয়ের পর তাদের মেয়ের সংসার হচ্ছে না। পরে তারা গাছের সঙ্গে বেঁধে স্যান্ডেলে গোবর লাগিয়ে এবং লাঠি দিয়ে আমার হাত, পা ও মাথায় মারধর করে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে অন্তত এক ঘণ্টা ধরে মারধর করে। খবর পেয়ে আমার ভাই নজরুল এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
ভুক্তভোগীর ছেলে সোনাউল্লাহ শেখ বলেন, ‘আমার বাবা পেশাদার ঘটক না, কারও কাছে কোনো টাকা চাননি। পরিচিতজনদের ভালো চেয়ে বিয়ে ঠিক করে দিয়েছিলেন। আর সেই ভালো চাওয়ার পুরস্কার হিসেবে তাকে যেভাবে বেঁধে মারধর করা হয়েছে, তা অমানবিক।’
Advertisement
এ বিষয়ে কনের বাবা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিয়ের দুদিন পর থেকেই জামাই ও তার পরিবারের লোকজন আমার মেয়েকে মেনে নিচ্ছে না। খারাপ আচরণ করছে। অথচ ঘটক মজিবর শেখ বিয়ের আগে বলেছিলেন, ছেলের পরিবার ভালো। তাই আমরা একটু রাগের মাথায় মজিবরকে ডেকে এনে একটু শাসন করেছি।’
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন বলেন, ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে মারধরের সত্যতা মিলেছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, মজিবর শেখকে গুরুতর আহত অবস্থায় রোববার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার শরীরে আঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল।
এলবি/এসআর/জেআইএম