ফরিদপুর শহরতলির কানাইপুরের ওবায়দুর হত্যা মামলার প্রধান আসামি খায়রুজ্জামান খাজাকে সদর উপজেলার জিয়া মঞ্চের সভাপতি করা হয়েছে। তিনি কোতোয়ালি থানায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুতাসহ একাধিক মামলার আসামি।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরের দিকে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সভায় সংগঠনটির সদর উপজেলার আংশিক কমিটির সভাপতি হিসেবে খায়রুজ্জামান খাজার নাম ঘোষণা করা হয়।
নবগঠিত কমিটিকে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে জিয়া মঞ্চ ফরিদপুর জেলা শাখায় কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন নেতারা।
এসময় জিয়া মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম টি আখতার টুটুল, ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস সাজ্জাদ আহমেদ শাওন, জেলা জিয়া মঞ্চের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ বি এম মোর্শেদ পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম আলী উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের ভাটী লক্ষ্মীপুর গ্রামের হানিফ মাতবরের ছেলে খায়রুজ্জামান খাজা। তার বড় ভাই বর্তমান কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আলতাফ হুসাইন। এছাড়া তিনি সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের কথিত ভাগনে।
খায়রুজ্জামান খাজা পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশের হাতে একাধিকবার আগ্নেয়াস্ত্র, ইয়াবা, দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে আসেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলিসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন খায়রুজ্জামান খাজা। সড়কে বাসে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় তাকে আটক করা হয়। এসময় বেশ কয়েকটি ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। ২০২১ সালের ১৫ মে দুজন সহযোগীসহ কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেফতার করে খাজাকে।
২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল ইয়াবাসহ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। একই বছরে তৎকালীন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান অন্যত্র বদলির পরেরদিন এলাকায় ছাত্রলীগের বিভক্তিকরণে সহযোগীদের নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেন খাজা। যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরেই ২৮ আগস্ট দেশীয় অস্ত্রসহ খাজা ও তার চার সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
Advertisement
সবশেষ চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি নির্যাতনে নির্মমভাবে খুন হন কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিল্লাল খানের ছোট ছেলে ওবায়দুর রহমান খান। ওবায়দুরকে তুলে নিয়ে পেরেক দিয়ে দুই চোখ খোঁচানো হয়। হাত-পায়ের রগ কেটে ফেলাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ১১ জানুয়ারি দিনগত রাতে খাজাকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের মা রেখা বেগম।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে খায়রুজ্জামান খাজার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে জেলা জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম আলী দাবি করেন, খাজা কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ গ্রুপের রোষানলে তাকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ওবায়দুর হত্যা মামলায় আদালত এখনো তাকে দোষী সব্যস্ত করেননি। ঘটনাস্থলেও খাজা ছিলেন না। ত্যাগী নেতা হিসেবে তাকে দলে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, কানাইপুরে ওবায়দুর হত্যার মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তধীন। এরমধ্যে সম্প্রতি খায়রুজ্জামান খাজা উচ্চ আদালত থেকে কয়েক সপ্তাহের জামিনে রয়েছেন।
এন কে বি নয়ন/এসআর/জেআইএম