সানজানা রহমান যুথী
Advertisement
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার মূলে রয়েছে আত্মবিশ্বাস। এটি এমন একটি মানসিক শক্তি যা মানুষকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শেখায়, যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে দৃঢ় রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নানা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, সামাজিক চাপ, শৈশবের কিছু নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, এমনকি ঘনিষ্ঠজনদের কিছু কথাও আমাদের আত্মবিশ্বাসকে নড়বড়ে করে দেয়। আমরা বুঝি, আত্মবিশ্বাস দরকার, কিন্তু কীভাবে নিজের হারিয়ে ফেলা আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনব, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন কিছু ইতিবাচক অভ্যাস, নিজেকে ভালোবাসার মানসিকতা এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। চলুন জেনে নেওয়া যাক আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কিছু বাস্তব ও কার্যকর উপায়—
নিজের অধিকার বুঝে নেওয়াছোটবেলা থেকেই আমাদের বলা হয় ‘চুপ থাকো’, ‘সবাইকে মানিয়ে চলো’, ‘অতিরিক্ত কথা বলো না’, ‘বড়দের সামনে বেশি কথা বলা ঠিক না’- এসব কথাগুলো আমাদের মনের ভেতর ভয় ঢুকিয়ে দেয়, যার প্রভাব পড়ে আত্মবিশ্বাসে। ধীরে ধীরে আমরা নিজের অধিকার নিয়েও সন্দিহান হয়ে পড়ি। অথচ আত্মবিশ্বাসের মূল ভিত্তি হলো নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা। আপনি যদি বুঝতে পারেন কোন জায়গায় আপনার প্রতি অন্যায় হচ্ছে, তাহলে সেখানে স্পষ্টভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। নিজের অনুভূতি, সিদ্ধান্ত ও চাহিদাগুলোকে গোপন না রেখে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রকাশ করুন। মনে রাখবেন, নিজেকে শ্রদ্ধা করতে জানলে, অন্যের কাছ থেকেও আপনি সম্মান পাওয়ার দাবি রাখতে পারেন।
এমন মানুষের সঙ্গে থাকুন যারা আপনাকে সম্মান করেআত্মবিশ্বাসহীনতার অন্যতম একটি কারণ হলো নেতিবাচক সম্পর্ক। আমরা অনেকেই এমন কিছু সম্পর্কে আটকে থাকি, যারা আমাদের ভালো না বুঝলেও, সামাজিক চাপে বা একাকীত্ব এড়াতে সেই সম্পর্ক বজায় রাখি। কিন্তু যারা আপনাকে তুচ্ছ করে, অপমান করে বা আপনাকে বারবার আপনার দুর্বলতার কথা মনে করিয়ে দেয়, তারা কখনোই আপনার আত্মবিশ্বাস গঠনে সহায়ক হতে পারে না। নিজের আশেপাশে এমন মানুষ রাখুন যারা আপনার মেধা, অনুভূতি এবং অস্তিত্বকে সম্মান করে। ইতিবাচক ও সমর্থনমূলক পরিবেশে আত্মবিশ্বাস অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
Advertisement
নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিনআমাদের অনেককেই ছোটবেলায় বিভিন্ন কাজে নিরুৎসাহিত করা হয়-তুমি পারবে না, এটা তোমার জন্য না, এসব করো না ইত্যাদি। এতে করে আমরা ধীরে ধীরে নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু সমাজের কাঠামো অনুযায়ী চলতে শিখি। কিন্তু আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হলে নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। আপনি যদি নাচতে ভালোবাসেন, তবে নাচুন; প্রিয় পোশাক পরতে ভালো লাগে, তবে পরুন; প্রশ্ন করতে চান, দ্বিধা না করে জিজ্ঞেস করুন। আপনি যেসব বিষয়ে আগে নিজেকে ‘অযোগ্য’ মনে করতেন, সেগুলোতেই নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন। দেখবেন, নিজেকে নতুন করে চিনতে পারছেন এবং আত্মবিশ্বাস ধীরে ধীরে ফিরছে।
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন আত্মবিশ্বাস মানেই নিজেকে বিশ্বাস করা। আপনি নিজেই যদি নিজের ওপর আস্থা না রাখেন, তাহলে অন্য কেউ কীভাবে আপনার ওপর আস্থা রাখবে? জীবনের ছোট ছোট কাজে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ তৈরি করুন। একটি কাজকে সফলভাবে শেষ করলে সেটি আপনার মনে ইতিবাচক বার্তা দেয়, এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সাহস জোগায়। মনে রাখবেন, সব কাজেই সফলতা আসবে না। কিন্তু চেষ্টা করার মাধ্যমে আপনি শিখবেন, পরিণত হবেন, এবং এখান থেকেই জন্ম নেবে আত্মবিশ্বাস।
ভয়কে জয় করতে শিখুনভয় পাওয়া মানেই আপনি দুর্বল, তা নয়। বরং ভয় থাকা স্বাভাবিক। আত্মবিশ্বাসী মানুষরাও ভয় পায়। পার্থক্য হলো, তারা ভয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করে না। তারা ভয়কে বিশ্লেষণ করে, তার উৎস বোঝে এবং ভয় থাকা সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত নেয়। আপনি যখন নিজেকে প্রশ্ন করবেন, আমি কেন ভয় পাচ্ছি?, এই ভয়টা কতটা বাস্তব? তখন আপনি দেখতে পাবেন, অনেক ভয় আসলে অমূলক এবং কল্পনার সৃষ্টি। ভয়কে চ্যালেঞ্জ করুন, কারণ আপনি যত বেশি ভয়ের মুখোমুখি হবেন, ততই আপনি শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।
নিজেকে সময় ও যত্ন দিনআমাদের শরীর ও মন দুটোই আত্মবিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন। হোক সেটা বই পড়া, হাঁটাহাঁটি, প্রিয় গান শোনা কিংবা নিজের যত্ন করা-সবই আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করে। নিজের যত্ন নেওয়া মানেই নিজেকে ভালোবাসা এবং স্বীকৃতি দেওয়া, যা আত্মবিশ্বাস তৈরির অন্যতম শর্ত।
Advertisement
ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখুনআমরা অনেক সময়ই একটি ভুল বা ব্যর্থতার জন্য নিজেকে অযোগ্য মনে করতে শুরু করি। কিন্তু সত্য হলো, ব্যর্থতা জীবনেরই অংশ। আত্মবিশ্বাসী মানুষরাও ভুল করে, কিন্তু তারা ভুল থেকে শেখে, নিজেকে আরও উন্নত করে। তাই আপনি যদি কোনো কাজে ব্যর্থ হন, তাহলে হতাশ হবেন না। বরং চিন্তা করুন, আপনি এখান থেকে কী শিখলেন, কীভাবে আরও ভালো করা যায়।
আত্মবিশ্বাস রাতারাতি গড়ে ওঠে না। এটি ধীরে ধীরে তৈরি হয়। প্রতিদিনের ছোট ছোট চর্চা, নিজেকে ভালোবাসা, নিজের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া, ভয়কে মোকাবিলা করা-এই সব মিলেই গড়ে তোলে একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ। আপনার জীবনে যত সমস্যাই আসুক, মনে রাখবেন, আপনি পারবেন। নিজের ভেতরের শক্তিকে চিনুন, তাকে লালন করুন। তাহলেই একদিন আপনি নিজেই নিজের শক্তির প্রমাণ হয়ে উঠবেন।
জেএস/জিকেএস