বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে চালের দাম। অস্বস্তিতে পড়েছেন বাজার করতে আসা মানুষেরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধরন ভেদে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে আট টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গেলো এক সপ্তাহ থেকে দাম বেড়েছে। এছাড়া বৃষ্টির অজুহাতে বেড়েছে সবজির দাম।
Advertisement
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকাম ও আড়তগুলোতে চালের দাম বেড়েছে। চালকল মালিকরা ঈদের পর চালের দাম বাড়িয়েছেন। সামনে হয়ত আরও বাড়তে পারে।
শনিবার (২১ জুন) রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। চাল বিক্রেতারা বলছেন, বোরো ধানের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরু তথা মিনিকেট চালের দাম এখন বাড়তি। সরু চালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে মোটা ও মাঝারি চালের দামও বাড়ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতি কেজি চাল ২ থেকে ৫ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮/পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে।
Advertisement
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত এক সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি ছয় থেকে আট টাকা বেড়েছে। আর মোটা ও মাঝারি চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দুই-তিন টাকা। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তারা সাধারণত মিনিকেট চাল বেশি খান।
চাল বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, সম্প্রতি প্রতিকেজি চালের দাম গড়ে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে সব ধরনের চালেরেই এখন কিছুটা দাম বেড়েছে। বিশেষ করে মাঝারি ও ভালো মানের চালের চাহিদা যেমন বেশি, তেমনি তার দামও বাড়তির দিকে। প্রতি সপ্তাহেই পাইকারি বাজার থেকে আমরা কিছুটা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি, যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
সাহেব বাজারের চাল ক্রেতা মুজাহিদ বলেন, বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম থাকলেও চালের দাম স্থির নয়। সবজির দাম বাড়লে না নিলেও চলে, কিন্তু চাল তো প্রতিদিনের প্রধান খাদ্য। দাম বাড়লেও চাল কিনতেই হয়। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অসহায়ত্ব। কম আয়ের মানুষের জন্য এই বাড়তি চাপ মেটানো দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।
এদিকে ঈদের পর থেকে বেশ স্বস্তিদায়ক মুরগি, ডিমের বাজার। তবে বৃষ্টিতে সরবরাহ কমের অজুহাতে সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। আবার এরমধ্যে মুদি পণ্যগুলোর দামও তেমন বাড়েনি। কম দামে কেনা যাচ্ছে পেঁয়াজ আলুসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য।
Advertisement
ঈদের আগে থেকেই ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর ডিমের ডজন এখন ১২০-১৩০ টাকা। তবে ডিম ও মুরগির চাহিদা কম। বেশিরভাগ দোকানে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি মুরগির দামও কমেছে। আজ বাজারে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকায়। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়াও মাছের দাম গত সপ্তাহের মতোই আছে। এখন মাঝারি সাইজের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আকারভেদে কাতল মাছ ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, সিলভারকার্প, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, কৈ ২২০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৫০০ থেকে ৬০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজারে ঈদের পর কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে সবজির দাম। বাজারে বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, গাজর (দেশি) ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস লাউ ২০-৩০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০, দেশি শসা ৫০ টাকা, বরবটি ৪০, ঢেঁড়স ৪০, জালি কুমড়া ৫০ টাকা পিস, মিষ্টি কুমড়া কেজি ২০ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১৮০ ও দেশি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজি তেমন একটা বাজারে আসছে না। ফলে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা।
সবজি ক্রেতা নাদিম হোসেন বলেন, ঈদের পর থেকে সবজির দাম এমনিতেই বেড়েছে। নতুন করে আবার বৃষ্টির অজুহাতে আবারো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু করার নেই, বেশি দামে কিনতে কষ্ট হলেও কিনতে হচ্ছে।
সাখাওয়াত হোসেন/এফএ/এএসএম