ফিচার

ইয়োগা নাকি জিম উত্তর দেবে শরীর

ইয়োগা নাকি জিম উত্তর দেবে শরীর

রাজধানীর ফার্মগেটের ব্যস্ত বিকাল, কফির মগ হাতে দুই বন্ধু জয় ও সোহান আড্ডা দিচ্ছিলেন। জয় প্রতিদিন সকালে যোগাভ্যাস করেন, আর সোহান সন্ধ্যায় নিয়মিত যান জিমে। এক পর্যায়ে দুজনেই নিজেদের শরীরের পরিবর্তন, মানসিক প্রশান্তি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার দিক নিয়ে তুলনা করতে থাকেন। সেখানেই তৈরি হয় প্রশ্নটি, ‘যোগা ভালো না জিম?’

Advertisement

এই প্রশ্নটি এখন কেবল দুই বন্ধুর আড্ডার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তরুণ সমাজের একটা সাধারণ দ্বিধার প্রতিচ্ছবি। শরীরের যত্ন নিতে চাইলে কী বেছে নেওয়া উচিত, ইয়োগা বা যোগব্যায়াম নাকি ঘাম ঝরানো জিম? এই দ্বন্দ্বের জবাব খুঁজতে গিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, একক কোনো উত্তর নেই। বরং ব্যক্তিগত প্রয়োজন, লক্ষ্য ও জীবনধারার ওপর নির্ভর করে তৈরি হয় নিজস্ব পথ।

জিম মানেই যেন এক ধরনের প্রতিযোগিতা। ওজন তুলে পেশি বানানো, ঘাম ঝরিয়ে চেহারায় শৃঙ্খলা আনা, কার্ডিওতে শ্বাস ফেলতে না পারার মতো করে পরিশ্রম করা, সব কিছুই যেন শরীরকে দ্রুত পরিবর্তনের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। যারা শরীরচর্চা বলতে বোঝে শক্তিমত্তা আর দৃশ্যমান মাংসপেশি, তাদের জন্য জিম এক ধরনের ফিটনেস মন্দির।

অন্যদিকে ইয়োগা বা যোগব্যায়াম বা যোগা অনেকটাই নীরব। এখানে দেহ নয়, মনও সমানভাবে সংশ্লিষ্ট। ইয়োগা প্রশিক্ষকদের মুখে একটি কথা সবসময় শোনা যায়-ইয়োগা কেবল ব্যায়াম না, এটি সাধনা। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ, ধ্যান, দেহের নমনীয়তা অর্জন সব মিলিয়ে গঠিত হয় এক ভিন্ন ধরনের সুস্থতা। এখানে ঘাম না ঝরলেও ভেতরে ভেতরে ঘটে যায় বড় পরিবর্তন। স্ট্রেস কমে, মন শান্ত হয়, ঘুম ভালো হয়। এই সব কিছুই যোগাভ্যাসের প্রভাব।

Advertisement

তরুণদের একটি অংশ এখন জিমে যাচ্ছেন নিজের শারীরিক সৌন্দর্য কিংবা ওজন কমানোর জন্য। অন্য অংশটি আবার যোগার দিকে ঝুঁকছেন দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের কথা ভেবে। কেউ হয়তো দিনের শুরুটা ম্যাটে বসে নিঃশ্বাসের অনুশীলনে শুরু করতে চান, আবার কেউ দিনের শেষে ডাম্বেল তুলে দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে চান। এই দুটি পথের মধ্যে তফাৎ শুধু দৃষ্টিভঙ্গির নয়, বরং লক্ষ্য ও শরীরের সঙ্গেও জড়িত।

যোগা এবং জিমের পার্থক্য বোঝা যায় ফলাফলের ধরন ও সময় অনুযায়ী। যারা দ্রুত শরীরের পরিবর্তন দেখতে চান, যেমন মেদ কমানো বা পেশি গঠন, তাদের জন্য জিম কার্যকর। আবার যারা ধীরে ধীরে শরীর ও মনের ভারসাম্য আনতে চান, তারা যোগা বেছে নেন। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার যে দুই পথেই শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ও মনোযোগ জরুরি। কোনোটিই ম্যাজিক নয়, বরং অভ্যাসের ফলেই আসে সাফল্য।

বয়সভেদেও এই সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়ে। তরুণদের জন্য জিম সহজতর হতে পারে, কারণ তাদের দেহ চাপ সহ্য করতে সক্ষম। তবে যারা ৩০ পেরিয়ে গেছেন, বা যাদের আগে থেকেই কোনো শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের জন্য যোগাভ্যাস অনেকটাই নিরাপদ ও উপকারী। বিশেষ করে হাঁটু ব্যথা, কোমর ব্যথা বা মেরুদণ্ডের সমস্যা থাকলে জিম বিপজ্জনক হতে পারে। সেখানে যোগা ধীরে ধীরে শরীরকে নমনীয় করে তোলে এবং সুস্থ করে তোলে ভেতর থেকে।

এছাড়া মানসিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। যারা দীর্ঘদিন স্ট্রেস, ঘুমের সমস্যা বা মনোযোগে ঘাটতির মতো বিষয়ে ভুগছেন, তাদের জন্য যোগা কার্যকর একটি পথ। ধ্যান, প্রাণায়াম ও সহজ আসনগুলো একসঙ্গে মিলে তৈরি করে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি, যা শুধু শরীর নয়, জীবনের সামগ্রিক গঠনে সাহায্য করে। জিমে এসব পাওয়া যায় না, বরং সেখানে থাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর নিজের চেহারার প্রতি এক ধরনের অবসেশনের প্রবণতা।

Advertisement

তবে এই তুলনায় একে অপরকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। জীবনযাপনের ধরণ অনুযায়ী কেউ হয়তো সকালে যোগা করে মন শান্ত করেন, আবার সন্ধ্যায় জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করেন। দুটো পথই একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, যদি তা সঠিকভাবে এবং নিয়মিত চর্চা করা যায়।

আজ ২১ জুন, আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে এই প্রশ্ন নতুন করে সামনে আসে সুস্থতার জন্য কোন পথটি সবচেয়ে উপযুক্ত? এর উত্তর খুব সরল নিজের শরীরকেই শুনতে হবে। যেটা শরীর ও মন গ্রহণ করে, যেটা অভ্যাসে পরিণত হয়, সেটাই সঠিক পথ। একেকজনের জন্য একেক রুটিন, একেক উপায়, একেক ফল। তাই কারো দেখাদেখি নয়, বরং নিজের অনুভব ও প্রয়োজনে খুঁজে নিতে হবে সেই উত্তর যোগা না জিম? শরীরই বলবে আসল উত্তর।

আরও পড়ুন গাছের ভাষায় প্রকৃতির পাঠশালা  রোদ-ধুলার শহরে হারিয়ে যাচ্ছে ছায়া 

কেএসকে/জিকেএস