মাহমুদা আক্তার
Advertisement
ঈদের ছুটিতে ঢাকার ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেয়ে ফিরে গিয়েছিলাম নিজের প্রিয় জেলা নেত্রকোনায়। শহরের কোলাহল ভুলে গ্রামীণ পরিবেশের প্রশান্তি উপভোগ করছিলাম পরিবারের সাথে। ছুটির মধ্যেই হঠাৎ মনে হলো এবার পাঁচগাঁও ঘুরে দেখা যাক। বহুদিন ধরেই শুনছিলাম, কলমাকান্দা উপজেলার পাহাড়ি এই সীমান্তগ্রাম সম্পর্কে। যেখানে রয়েছে ঝিরিপথ, সবুজ টিলা আর রহস্যময় চন্দ্রডিঙ্গা।
বাড়ি থেকে দুপুরেই রওয়ানা দিলাম। কলমাকান্দা পর্যন্ত পৌঁছে স্থানীয় পরিচিতদের সহায়তায় সিএনজিতে উঠে নিলাম পাহাড়ের পথ। চারপাশে পাহাড়ি বনভূমি, মাঝে মাঝে বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেত আর মাথার ওপর উজ্জ্বল রোদ। সত্যিই মন ছুঁয়ে যাওয়া একটি পরিবেশ। পাঁচগাঁও পৌঁছেই যে জিনিসটি প্রথম চোখে পড়লো; সেটি বিশাল একটি পুরোনো বটগাছ। তার ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে পা বাড়ালাম।
পাঁচগাঁও টিলায় ওঠার পথটা অল্প হলেও রোমাঞ্চকর। কখনো সরু পথ, কখনো পাথুরে ঢাল আবার কোথাও কোথাও ছোট ছোট ঝিরিপথ। কিছুটা ওপরে উঠতেই চারপাশটা যেন সবুজে ডুবে গেল। ঝিরির ঠান্ডা জল পায়ে লাগতেই শরীরের ক্লান্তি এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। চারপাশের নিস্তব্ধতা, পাখির ডাক আর দূরের পাহাড়ি বাতাস যেন এক স্বপ্নের জগত।
Advertisement
ওপরে উঠে চোখে পড়ল কিছু মিনি ঝরনা। ভরা বর্ষা থাকায় পানি প্রবাহ ভালোই ছিল। চোখের সামনে দেখা এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য আর শীতল পরিবেশ এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়। পাশেই দেখা মিলল কিছু স্থানীয় গারো ও হাজং শিশুদের, যারা আমাদের দেখে মৃদু হাসিতে অভ্যর্থনা জানাল। তাদের সরলতা আর প্রাণচাঞ্চল্য যেন পাহাড়েরই অংশ।
আরও পড়ুন বর্ষায় ঘুরে আসুন চায়ের দেশের ৫ স্থান ঝরনা ও পাহাড় ভ্রমণে যেসব সতর্কতা জরুরিচন্দ্রডিঙ্গা নামের যে পাহাড়টি পাঁচগাঁওয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ; সেটির নাম এসেছে চাঁদ সওদাগরের নৌকার কিংবদন্তি থেকে। স্থানীয়দের মতে, বহু বছর আগে এখানে নাকি চাঁদ সওদাগরের নৌকা ডুবে গিয়েছিল। সেই নৌকার মতো দেখতে বলেই পাহাড়টির নাম হয়েছে ‘চন্দ্রডিঙ্গা’। সত্যিই ওপরে থেকে পাহাড়টির আকৃতি অনেকটা বিশাল এক নৌকার মতো মনে হয়।
পাহাড়ের আশেপাশে ঘোরাঘুরির সময় শুনলাম, এখন পাঁচগাঁওয়ে পর্যটকদের জন্য তৈরি হয়েছে ‘চন্দ্রডিঙ্গা রিসোর্ট’। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে সেখানে থাকিনি। তবুও এটি দেখে ভালোই লাগলো যে, পর্যটনের সুবিধা বাড়ছে। চাইলে এখানে রাত কাটানো, ক্যাম্পিং বা দলবেঁধে ক্যাম্পফায়ারের মতো আয়োজন করা যায়। ফলে পাহাড়ি জনপদে পর্যটকদের আগ্রহও বাড়ছে।
দিনের শেষে ফিরে আসার সময় মনটা হালকা হলেও মনে হচ্ছিল, কিছু একটা এখানেই ফেলে যাচ্ছি। হয়তো ঝিরিপথের শীতল জল কিংবা পাহাড়ের নীরবতা অথবা সেই শিশুদের নিঃশব্দ হাসি। ক’দিন পরেই ফিরে যাবো ব্যস্ততার শহরে। তবে ব্যস্ত জীবনে ফিরলেও পাঁচগাঁওয়ের সবুজ ছোঁয়া যেন আমার সাথেই রয়ে যাবে, এমনটাই বিশ্বাস!
Advertisement
যারা ঢাকা থেকে পাঁচগাঁও যেতে চান, তাদের প্রথমে যেতে হবে নেত্রকোনা জেলায়। মহাখালী থেকে নিয়মিত নেত্রকোনাগামী বাস যাতায়াত করে। ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকার মতো। নেত্রকোনা নেমে কলমাকান্দা যেতে হবে। ঢাকা থেকে সরাসরি কলমাকান্দার বাসও আছে। কলমাকান্দা নেমে অথবা সিএনজিতে করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন পাহাড়ি সৌন্দর্যে।
পাঁচগাঁওয়ের চন্দ্রডিঙ্গা টিলা ভ্রমণের আগে হালকা পোশাক, ভালো গ্রিপের জুতা, পানি, শুকনো খাবার, ফাস্টএইড, পাওয়ার ব্যাংক ও সানস্ক্রিন সঙ্গে রাখা আবশ্যক। টিলার পথ পিচ্ছিল হতে পারে। তাই সাবধানে চলাফেরা এবং সময়মতো যাত্রা করাই উত্তম।
এসইউ/জিকেএস