ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বেশ কয়েকজন তরুণ যুবককে দেখা গেছে নির্বাচনী প্রচারণায়। এর আগেও এ আসন থেকে তরুণদের প্রতিনিধি হওয়ার আগ্রহ ছিল। সব মিলিয়ে এ আসনে ভোটের মাঠে এখন পর্যন্ত তরুণরাই এগিয়ে। চলছে নবীন-প্রবীণে ভোটের লড়াইয়ের প্রস্তুতি।
Advertisement
ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা মামুনুর রশিদ এই আসনে নির্বাচন করতে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। মিছিল, শোডাউন ও পোস্টারিং করে নিজেকে জানান দিচ্ছেন। এই আসনে সংসদ নির্বাচনে লড়বেন হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন। দলের বর্ষীয়ান নেতা মিজানুর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
ছাত্রনেতা মামুনুর রশিদ বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে তরুণনির্ভর বাংলাদেশ। জনগণও চায় তরুণদের হাতে থাকুক আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব। তাই জনগণের আকাঙ্ক্ষা একধাপ এগিয়ে নিতে নির্বাচন করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে সহযোগিতা করছে একঝাঁক শিক্ষিত তরুণ। আশা করি তরুণদের সময় সামনে আসছে। তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলে সবার আগে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হবে। তাই সবাইকে আহ্বান করবো বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের হাত শক্তিশালী করুন।
এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬০। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৯০ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭০। সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা ৫৩ হাজার ৫৭৬। এই আসনে জিততে হলে নারী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের টানতে হবে প্রার্থীদের।
Advertisement
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে আগ্রহী বেশকিছু ছাত্র। যারা সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন দেখতে চান।
আরও পড়ুন
গণতন্ত্র ফেরাতে দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি: আমীর খসরু সরাসরি ভোটে সংসদে ১০০ নারী এমপি প্রয়োজন: সারজিসসাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সবার আগে বাংলাদেশ। আগামীর নির্বাচন বাংলাদেশকে সাজানোর চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। ভোট দিতে জনগণ মুখিয়ে আছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হবে এবং আমরা সবাই স্বাধীনভাবে ভোট দেব। আমি সাবেক সংসদ সদস্য। নির্বাচিত হওয়ার পরেও আমার গ্রহণযোগ্যতা কমাতে আমাকে কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়নি। আমি স্বৈরাচার হাসিনার শাসনামলে পদত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু আমি আশা করি এমন বৈষম্য দেশে আর হবে না।
প্রবীণ জামায়াত নেতা মিজানুর রহমান বলেন, দল থেকে আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। জনগণ আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে আশা প্রকাশ করছি। ১৭ বছর সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার আশা করছি সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু একটা ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
Advertisement
আগামীর বাংলাদেশ হবে তরুণনির্ভর বাংলাদেশ। জনগণও চায় তরুণদের হাতে থাকুক আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব। তাই জনগণের আকাঙ্ক্ষা একধাপ এগিয়ে নিতে নির্বাচন করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে সহযোগিতা করছে একঝাঁক শিক্ষিত তরুণ।-মামুনুর রশিদ
তবে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে ত্যাগীদেরই প্রাধান্য দেবে দল। এর ব্যত্যয় হলে দলের অন্তঃকোন্দল সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে সাধারণ মানুষ একদিকে যেমন সংস্কার চায় অন্যদিকে নিজের ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে চায়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত শুনে জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে যদি কোথাও কোনো অভিযোগ শুনতে পাওয়া যায় ভোট কারচুপি, ডামি ভোট, রাতের ভোট, ব্যালট ছিনতাই, নির্বাচনী সহিংসতার নামে মানুষ হত্যা তবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ধরে নেওয়া যাবে না। আমরা কড়া নিরাপত্তা চাই। সেই সাথে অবাধে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ চাই। একজন রিকশাওয়ালারও প্রার্থী হওয়ার অবাধ সুযোগ আগামীর নির্বাচনে থাকতে হবে। যেন আমরা গরিব মানুষরা পুঁজিবাদীদের টাকার কাছে জিম্মি না হই।
আরও পড়ুন
নির্বাচন এগিয়ে আনার বার্তা দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ: ফখরুল ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে সংস্কার ও জুলাই সনদ: আমীর খসরুঠাকুরগাঁও জেলার নির্বাচন অফিসার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমরা ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। আগামীর নির্বাচন জনগণের তথা ভোটারের শতভাগ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেই হবে।
ভোটের পরিসংখ্যানঠাকুরগাঁও-৩ আসন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি ঠাকুরগাঁও জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সংসদের পঞ্চম এবং জেলার তৃতীয় সংসদীয় আসন। রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত।
আমি সাবেক সংসদ সদস্য। নির্বাচিত হওয়ার পরও আমার গ্রহণযোগ্যতা কমাতে আমাকে কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়নি। আমি স্বৈরাচার হাসিনার শাসনামলে পদত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু আমি আশা করি এমন বৈষম্য দেশে আর হবে না।-জাহিদুল ইসলাম
নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬০। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৯০ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭০। সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা ৫৩ হাজার ৫৭৬। এই আসনে জিততে হলে নারী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের টানতে হবে প্রার্থীদের।
বিগত নির্বাচনে যারা জয়ী হয়েছেনএই আসনটিতে অধিকাংশ সময় জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি থেকেও নির্বাচিত হয়েছে কয়েকবার। তবে বিএনপি এই আসনে নির্বাচিত হয়েছে কেবল দুবার।
দল থেকে আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। জনগণ আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে বলে আশা প্রকাশ করছি। ১৭ বছর সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার আশা করছি সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু একটা ভোট অনুষ্ঠিত হবে।-মিজানুর রহমান
আরও পড়ুন
রমজানের আগে ভোট আয়োজনের প্রস্তাব তারেক রহমানের ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো জামায়াত১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মোকলেসুর রহমান। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে আব্দুল মালেক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমদাদুল হক। ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে ইয়াসিন আলী। ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে জাহিদুর রহমান। ২০২৩ সালের উপ-নির্বাচনে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনেও তিনি জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন।
টিএইচটি/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম