খেলাধুলা

নারী লিগে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ভারত-ভুটান

নারী লিগে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ভারত-ভুটান

সানজিদা আক্তার বাংলাদেশের নারী ফুটবলের অবিচ্ছেদ্য নাম। ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের এই রাইট উইঙ্গার অর্জন করেছেন 'পোস্টারগার্ল' খ্যাতি। স্কুল ফুটবল থেকে উঠে আসা সানজিদা আক্তার লাল-সবুজ জার্সিতে অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৯ জার্সিতে মাঠ মাতানোর পর জাতীয় দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন ২০১৬ সাল থেকে। বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড় থাকা অবস্থায়ই জাতীয় দলেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন এই নাম্বার সেভেন।

Advertisement

ক্লাব ফুটবলে তিনবার বসুন্ধরা কিংস, একবার নাসরিন স্পোর্টিংয়ে প্রতিনিধিত্ব করা সানজিদা ইতিহাসের অংশ হয়েছিলেন ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ইস্টবেঙ্গলেরর প্রথম বিদেশি ফুটবলার হিসেবে নাম লিখিয়ে। বাংলাদেশ, ভারত হয়ে সানজিদা এখন ভুটান লিগের দল থিম্পু সিটিতে। পাহাড়ি দেশটির ঘরোয়া লিগেও নিজেকে উপস্থাপন করছেন অভিজ্ঞতা দিয়ে। দুই ম্যাচ খেলে একটিতে জোড়া লক্ষ্যভেদ করেছেন সানজিদা।

বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটান তিন দেশের ঘরোয়া লিগে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করা সানজিদা আপাতত নেই বাংলাদেশ জাতীয় দলে। দক্ষিণ এশিয়ার এই তিন দেশের ঘরোয়া নারী লিগ, তিন লিগের সুযোগ সুবিধা ও পেশাদারিত্বের বিবেচনায় কারা এগিয়ে এ নিয়ে জাগো নিউজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এআইইউবি)'র এই শিক্ষার্থী। সেখানে নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার, তিন দেশের ক্লাব ফুটবলে খেলার অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম স্টাইলিস্ট এই ফুটবলার।

জাগো নিউজ: কেমন আছেন?

Advertisement

সানজিদা আক্তার: আলহামদুল্লিাহ ভালো।

জাগো নিউজ: ভুটানে কেমন কাটছে আপনার দিন। এ পর্যন্ত কয়টা ম্যাচ হলো আপনাদের ক্লাবের। ফলাফলই বা কি?

সানজিদা আক্তার: এখানে সময় ভালোই কাটছে। আমরা এ পর্যন্ত ২টা ম্যাচ খেলেছি। দুই ম্যাচই সহজে জিতেছি।

জাগো নিউজ: এক ম্যাচে তো গোলও করেছেন তাই না?

Advertisement

সানজিদা আক্তার: প্রথম ম্যাচে গোল পাইনি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে গেলেফু গার্লস একাডেমির বিপক্ষে জোড়া গোল করেছি।

জাগো নিউজ: আপনার তো বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের ঘরোয়া লিগে খেলার অভিজ্ঞতা হলো। তিন দেশের ক্লাবগুলোকে নিয়ে যদি কিছু বলতেন।

সানজিদা আক্তার: আমি দেশে বসুন্ধরা কিংসে তিন মৌসুম খেলেছি। এক মৌসুম খেলেছি নাসরিন স্পোর্টি ক্লাবে আর এক মৌসুম ভারতের ইস্টবেঙ্গলে। এবার যোগ দিয়েছি ভুটানের ক্লাব থিম্পু সিটিতে। তিন দেশের লিগে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা আমার। তিন দেশের লিগ তিনভাবেই উপভোগ করছি। জাগো নিউজ: নারী ফুটবলে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ভুটান। তো সেই দেশের ঘরোয়া লিগ কেমন?

সানজিদা আক্তার: পেশাদারিত্বের দিকে ভুটানের ঘরোয়া লিগ বেশ উন্নত।

জাগো নিউজ: ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশের লিগ নিয়ে যদি তুলনা করতে বলি তাহলে কোন দেশের লিগকে আপনি এগিয়ে রাখবেন?

সানজিদা আক্তার: বাংলাদেশের চেয়ে আমি ভারত ও ভুটানের লিগকে এগিয়ে রাখবো।

জাগো নিউজ: কি কারণে এগিয়ে রাখবেন যদি ব্যাখ্যা করতেন?

সানজিদা আক্তার: ভারত ও ভুটান লিগের চ্যাম্পিয়ন দল এএফসি উইমেন্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলে। বাংলাদেশের কোনো ক্লাব সেই সুযোগ পায় না। সর্বশেষ এএফসি উইমেন্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভারত, ভুটান ও নেপালের ক্লাব খেলেছে।

জাগো নিউজ: আপনি বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের লিগে খেলেছেন। কাঠামোগত দিক দিয়ে তিন দেশের লিগের যদি তুলনা করতেন!

সানজিদা আক্তার: দেখুন, বাংলাদেশে লিগ হয় এক মাঠে এবং এক মাসের মধ্যেই শেষ হয়। সেখানে ভারত ও ভুটানের লিগের সময়কাল অনেক লম্বা হয় এবং সেটা এএফসির গাইডলাইন মেনে। ভারতের লিগে খেলেছি। সেখানে অনেক প্রদেশে গিয়ে ম্যাচ খেলতে হয়েছে। ভুটান ছোট্ট দেশ হলেও অনেক দুরের দুরের ভেন্যুতে গিয়ে আমাদের ম্যাচ খেলতে হয়। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে যে লিগ হয় সেটা প্রকৃতপক্ষেই হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে। বাংলাদেশে তো এক ভেন্যুতেই হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে।

জাগো নিউজ: এই তিন দেশের লিগে আরো কি পার্থক্য?

সানজিদা আক্তার: বিদেশি খেলোয়াড়। ভারতের নারী লিগে বিদেশি ফুটবলার খেলেন। ভুটানের লিগেও খেলেন। বাংলাদেশতো এখনো লিগে বিদেশি অন্তর্ভূক্ত করতে পারেনি।

জাগো নিউজ: ভুটানের লিগে কোন কোন দেশের ফুটবলার আছেন?

সানজিদা আক্তার: ভুটানের লিগে ১০ ক্লাব। বিদেশি কোটা ৬ জন। আমরা বাংলাদেশেরই ১০ ফুটবলার খেলছি চারটি ক্লাবে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলার আছেন। আমাদের ক্লাবে ৫ জন বিদেশি ফুটবলার আছেন।

জাগো নিউজ: আপনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলে ইতিহাস গড়েছেন। ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটির প্রথম বিদেশি নারী ফুটবলার হিসেবে আপনার নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে। ফ্রি-কিকে দুর্দান্ত এক গোল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে সময়টা কেমন কেটেছিল? মানে ইস্টবেঙ্গলের পরিবেশ কেমন লেগেছে আপনার কাছে?

সানজিদা আক্তার: অবশ্যই ভালো। কোচ, ক্লাব কর্মকর্তা এবং সতীর্থরা আমাকে অনেক গুরুত্ব দিতেন।

জাগো নিউজ: শুনেছি ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আপনাকে পরের আসরেও খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল। গেলেন না কেন?

সানজিদা আক্তার: গত মৌসুমে আমি ক্লাবটির হয়ে ৬ ম্যাচ খেলেছিলাম। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব থেকে আমার কাছে জানতে চেয়েছিল খেলতে আগ্রহী কি না। আসলে দলটিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কোচও এসেছেন নুতন। এই কোচ তার আগের ক্লাব গোকুলাম থেকে আফ্রিকান ফুটবলার এনেছেন। আমার কাছে তেমন যুতসই মনে হয়নি। তাছাড়া আমার মনমানসিকতাও ভালো ছিল না। কেমন দল হয় না হয়। তাই আর যাওয়া হয়নি।

জাগো নিউজ: ভুটানের ক্লাব থিম্পু সিটির সাথে আপনার কতদিনের চুক্তি হয়েছে?

সানজিদা আক্তার: ভুটানের লিগ শেষ হবে সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে। আমার সাথে চুক্তি হয়েছে লিগের প্রথম লেগ পর্যন্ত।

জাগো নিউজ: এখানে থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেমন?

সানজিদা আক্তার: অনেক ভালো। ওদের মধ্যে পুরো পেশাদরিত্ব আছে। আমরা বাংলাদেশের তিনজন ও ভারতের দুইজন বিদেশি খেলোয়াড়। ৫ জনকেই একটি গেস্ট হাউজে রাখা হয়েছে। ক্লাবটির খাওয়া-দাওয়া থেকে ট্রেনিং, জিম ও সুইমিং সবই উন্নতমানের।

জাগো নিউজ: ভারতের যে দুই ফুটবলার এসেছেন তাদের কেউ কি পূর্ব পরিচিত? মানে ইস্টবেঙ্গলে খেলার সময়ে পরিচিত কিনা?

সানজিদা আক্তার: সোনালী নামের কলকাতা লিগ খেলা একজন স্ট্রাইকার নতুন এসেছেন ভুটানে।

জাগো নিউজ: ভুটানেই ঈদ কাটালেন। কেন হলো পরিবার ছাড়া ঈদ?

সানজিদা আক্তার: পরিবার ছাড়া ঈদ আমার জন্য প্রথম নয়। আগেও বাফুফে ভবনে একাধিকবার ঈদ উদযাপন করেছি। তবে বিদেশে এটাই আমার প্রথম ঈদ ছিল। একদম নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে।

জাগো নিউজ: ঈদের দিনে কি করলেন? কি খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন?

সানজিদা আক্তার: নিজেরাই রান্না করেছিলাম। সকালে সেমাই। দুপুরে পোলও। সাথে গরু, মুরগি।

জাগো নিউজ: দেশে থাকলে তো নতুন ড্রেস কিনতেন। এবার কি সেটা মিস হয়েছে?

সানজিদা আক্তার: না না। আমি ঈদের পোশাক বাংলাদেশ থেকে কিনে এনেছিলাম। অনলাইনে অর্ডার দিয়েছিলাম। মারিয়া মান্দা ও শামসুন্নাহার সিনিয়র ঈদে দেশে গিয়েছিল, ওরা নিয়ে এসেছে।

জাগো নিউজ: বাফুফের সাথে তো নতুন করে চুক্তি হয়েছে আপনার। কিন্তু এখন তো জাতীয় দলে নেই।

সানজিদা আক্তার: আসলে আমি ওই বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।সানজিদা আক্তার: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/আইএইচএস/