পাবনা সদর উপজেলার জোতদাম এলাকার হাফিজুল ইসলাম। বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হয়ে খুইয়েছেন নিজের সর্বস্ব। সবশেষ গত দু’মাস আগে জমি বন্ধক দিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনে নিজেই চালাতে শুরু করেন। এসময় পুলিশি ঝামেলা না দেখা গেলেও হঠাৎই গত শুক্রবার (২০ জুন) পুলিশ ও সেনাবাহিনী তার অটোরিকশাটি আটক করেন। মামলা দেন ১০ হাজার টাকার। এরপর নিজে চালিয়ে কোনোরকম ত্রুটিহীন অটোরিকশাটি পুলিশ লাইনের মাঠে রেখে যান। কিন্তু পরদিনিই সকালে পুলিশ হেফাজতে থাকা অটোরিকশাটিতে আগুন ধরে যায়।
Advertisement
তিনি বলেন, নিজে গাড়ি পুলিশ লাইনের ভেতরে রেখে গেছি। পুলিশ চাবি নিয়ে মামলার টোকেন ধরিয়ে দিলো। টাকা নাই, বাধ্য হয়ে চাচার থেকে ধার করে ১০ হাজার টাকার মামলা ভাঙিয়ে আসার পর পুলিশ বলছে একাই আগুন লেগে গাড়ি পুড়ে গেছে। গিয়ে দেখি গাড়ি একেবারে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। শুধু মাত্র সামনের গ্লাসটা আছে। কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি। এর মধ্যে পুলিশি হেফাজতে কীভাবে গাড়িতে আগুন লাগলো? আর ৩ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ এখন কে দেবে? হয় অক্ষত অবস্থায় আমার গাড়ি ফিরিয়ে দিক, না হয় দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক। তাছাড়া আমি কীভাবে সংসার চালাবো।
পাবনায় পুলিশ হেফাজতে থাকা তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। শনিবার (২১ জুন) সকালে পুলিশ লাইনের স্টাফ মেসের সামনের মাঠে রাখা অটোরিকশাগুলো পুড়ে যায়।
এর আগে শুক্রবার (২০ জুন) এসব অটোরিকশা আটক করা হয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশি হেফাজতে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক জানিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
Advertisement
পুলিশ ও ভুক্তভোগী অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার গাছপাড়া বাইপাস থেকে ফিটনেস ও কাগজপত্রে ত্রুটি থাকার অভিযোগে বেশকিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটক করে জরিমানা ও মামলা দেয় যৌথবাহিনী। পরে অটোরিকশাগুলো পুলিশ লাইন কম্পাউন্ডে স্টাফ মেসের সামনের মাঠে রাখা হয়। সেখানে থাকাবস্থায় শনিবার সকালে হঠাৎ তিনটি অটোরিকশা থেকে আগুন ও ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে চেষ্টা করলেও একটি অটোরিকশা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত ও আরও দুটি আংশিক পুড়ে যায়।
ভুক্তভোগীদের দাবি, শুরু থেকে পাবনার সড়কগুলোতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোয় কোনো সমস্যা না থাকলেও কোনো নোটিশ ছাড়া হঠাৎই শুক্রবার বেশকিছু অটোরিকশা আটক করে মামলা দেয় যৌথবাহিনী। এরপর চালকরা নিজে চালিয়ে ভালো গাড়ি রেখে গেলেও পরদিন সকালে পুলিশ বলছে একাই আগুন লেগে পুড়ে গেছে তিনটি গাড়ি।
তারা বলছেন, অধিকাংশ চালক ও মালিক প্রতিদিন সাধারণভাবেই বাড়িতে অটোরিকশা রাখলেও কখনো এমন দুর্ঘটনার শিকার হননি তারা। অথচ পুলিশি হেফাজতে এমন ঘটনা ঘটায় হতবাক তারা। ধারদেনা ও ঋণ করে কেনা অটোরিকশা পুড়ে যাওয়ায় তারা দিশাহারা জানিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
চাটমোহরের চালক কবির বলেন, আমার অটোরিকশা অর্ধেক পুড়ে গেছে। এই পোড়া গাড়ি ঠিক করাতে অনেক টাকা লাগবে। এই টাকা কোথায় পাবো? আমরা আমাদের গাড়ির ক্ষতিপূরণ চাই।
Advertisement
আটঘরিয়ার অটোরিকশা চালক মোস্তফা কামাল বলেন, হঠাৎ সকালে শুনি গাড়িতে আগুন লেগেছে। ছুটে এসে জানলাম আমার গাড়ির পেছনের তিনটা গাড়িতে আগুন লেগেছে। অল্পের জন্য আমারটা বেঁচে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়- পুলিশের কাছে আমাদের গাড়ি নিরাপদ কি না।
এ ব্যাপারে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মশিউর রহমান মন্ডল বলেন, বিষয়টি পুরোপুরি জানি না। তবে শুনেছি একটি অটোরিকশায় হঠাৎ আগুন লেগে যায় এবং তার দুইপাশে থাকা দুইটি অটোরিকশাও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আগুন লাগা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অটোরিকশার সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে এমনটি ঘটতে পারে। সেটির দায়তো পুলিশ নেবে না। তাছাড়া পুরো পুলিশ লাইন এরিয়া সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। ঠিক কীভাবে আগুন ধরলো সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
আলমগীর হোসাইন নাবিল/এফএ/জেআইএম