জাগো জবস

ক্যারিয়ারের হাতিয়ার কম্পিউটার সায়েন্স

ক্যারিয়ারের হাতিয়ার কম্পিউটার সায়েন্স

বর্তমানে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ছোঁয়া স্পষ্ট। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী শাখাগুলোর একটি কম্পিউটার সায়েন্স। আধুনিক বিশ্বের উন্নয়ন চিন্তাই করা যায় না এ টেকনোলজিকে বাদ দিয়ে। ফলে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে—কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং আসলে কী? এ টেকনোলজির কাজ কী? এ বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে? এ ছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। সেসব নিয়েই আজকের আয়োজন—

Advertisement

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং কী?আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে সবকিছু—শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, বিনোদন এমনকি চিন্তাভাবনার ধরনও। এ পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে কম্পিউটার প্রযুক্তি। বর্তমানে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই; যেখানে সফটওয়্যার ও ডেটার ব্যবহার নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন মানুষের ভাবনার আগেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাই প্রযুক্তির ভাষা না জানলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন, এমনকি ভবিষ্যতের দরজাও হয়তো আপনার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।

কম্পিউটার সায়েন্স শেখায় যুক্তিভিত্তিক চিন্তাভাবনা, সমস্যার বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান খুঁজে বের করা। একটি ল্যাপটপ ও কোডের ভাষায় একজন তরুণ তৈরি করতে পারেন একটি অ্যাপ, একটি উদ্যোগ বা এমনকি একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লব। তাই এ টেকনোলজি কেবল পেশার বিষয় নয়, এটি ভবিষ্যতের দিশা।

যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়অনেকের মধ্যেই একটি ভুল ধারণা আছে—কম্পিউটার সায়েন্স মানেই বুঝি শুধু প্রোগ্রামিং শেখা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রোগ্রামিং এ টেকনোলজির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এটি পুরো বিষয়ের সামান্য একটি অংশমাত্র।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের কম্পিউটার সায়েন্সে প্রোগ্রামিং শেখানোর পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার সিস্টেম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যালগরিদম, ডেটাবেজ, নেটওয়ার্কিং, সাইবার সিকিউরিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিংসহ অনেক বিষয় হাতেকলমে শেখানো হয়।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, এ বিভাগে যা পড়ানো হয় তা হলো—প্রথম বছর: বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা, যেমন- সি, সি প্লাস প্লাস।দ্বিতীয় বছর: ডেটা স্ট্রাকচার (কীভাবে কোটি কোটি ডেটা একসঙ্গে রাখা হয়), অ্যালগরিদম।তৃতীয় বছর: অপারেটিং সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে, হার্ডওয়্যারের বিভিন্ন কাজ, মাইক্রো কন্ট্রোলার, কম্পিউটার ইন্টারফেসিং কীভাবে হয় ইত্যাদি।চতুর্থ বছর: বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় বিভিন্ন বিষয়। যেমন- মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিষ্যৎ কীকম্পিউটার সায়েন্স এমন একটি ক্ষেত্র, যা শিক্ষার্থীদের সামনে সম্ভাবনার এক বিশাল দিগন্ত খুলে দেয়। এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী চাকরি, উদ্যোক্তা হওয়া কিংবা গবেষণার মতো বিভিন্ন পথ বেছে নিতে পারেন। চাকরির ক্ষেত্রে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে—বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার সিকিউরিটি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সায়েন্সসহ নানা ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য যারা বিদেশে পাড়ি জমান, তাদের একটি বড় অংশই কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করার পর সেখানে ক্যারিয়ার গড়েন। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং করারও সুযোগ আছে। তাই বলা যায়, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিষ্যৎ শুধু উজ্জ্বলই নয় বরং ভবিষ্যতের বিশ্ব গড়ার অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবেই তারা বিবেচিত হবেন।

Advertisement

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কর্মসংস্থানপ্রতিদিন প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র ও সম্ভাবনার দ্বার। শুধু বেসরকারি খাতেই নয়, ধীরে ধীরে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও এ টেকনোলজির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে। দেশে ও বিদেশে গুগল, সিসকো, ফেসবুকসহ বিশ্বের খ্যাতনামা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ আছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে হলে নিজেকে অবশ্যই দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সরকারি চাকরি১. বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল২. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ৩. বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন৪. বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড৫. বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি ব্যাংক৬. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো৭. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস৮. বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিভাগ৯. ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন প্রকল্প।

আরও পড়ুন বিদেশে পড়তে যাওয়ার পর যেসব বিষয় জানা জরুরি  যুক্তরাষ্ট্রের নক্স কলেজে ৩ কোটির বৃত্তি পেলেন সাদ 

বেসরকারি চাকরি ১. সফটওয়্যার ও আইটি কোম্পানি: এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার তৈরি, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট এবং মোবাইল অ্যাপ বানানোর কাজ হয়।

২. ই-কমার্স ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতে ডিজিটাল প্রক্রিয়া চালাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। তাই এখানে সফটওয়্যার ও ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনে দক্ষ জনবল দরকার হয়।

৩. ফিনটেক ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা: ফিনটেক কোম্পানিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সফটওয়্যার তৈরি, ডেটা বিশ্লেষণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করেন।

৪. টেলিকম কোম্পানি: বাংলাদেশের বড় টেলিকম অপারেটরগুলোতে সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক, সাইবার সিকিউরিটি, ডেটা অ্যানালিটিকস ইত্যাদিতে নিয়মিত নিয়োগ হয়।

৫. আইটি সাপোর্ট ও টেকনোলজি সার্ভিস কোম্পানি: প্রযুক্তিনির্ভর সেবা দেওয়ার জন্য অনেক কোম্পানিই নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, আইটি এক্সিকিউটিভ, টেক সাপোর্ট বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে।

৬. আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং খাত: এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ। এখানে ডেটা সায়েন্টিস্ট, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন।

৭. আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং কোম্পানি: নিজের দক্ষতা নিয়ে স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টের জন্য ওয়েবসাইট, অ্যাপস, ডিজাইন ইত্যাদি কাজ করা যায়।

অন্য ক্যারিয়ারপ্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতার মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন আইটি ট্রেনিং সেন্টারেও চাকরি করতে পারবেন। এমনকি বিভিন্ন টেলিভিশন এবং অনলাইন গণমাধ্যমেও কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে চাকরির সুযোগ দিনদিন বেড়েই চলেছে। যাদের প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেটা অ্যানালিটিকস কিংবা ডিজাইনিংয়ে দক্ষতা আছে, তাদের জন্য আছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। চাকরিগুলো শুধু বড় শহরেই সীমাবদ্ধ নয়, বিভাগীয় শহর, এমনকি জেলা পর্যায়েও ভালো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।

কারা পড়বেন কম্পিউটার সায়েন্সযারা প্রযুক্তিকে ভালোবাসেন, যুক্তি ও সমস্যার সমাধানে আনন্দ পান, গণিতে আগ্রহ আছে এবং ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে পারেন—তাদের জন্য আদর্শ বিষয় হলো কম্পিউটার সায়েন্স। সফল হতে হলে থাকতে হবে কঠোর অধ্যবসায়, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ এবং সমস্যা সমাধানের মানসিকতা। তাই কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এসব মাথায় রাখতে হবে।

কোথায় পড়বেনযদি কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। ডিপ্লোমা শেষে সরকারিভাবে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) বিএসসি করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিএসসি করা যাবে।

এসইউ/জিকেএস