অর্থনীতি

চামড়া শিল্পের অগ্রগতিতে অন্তরায় ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড’

চামড়া শিল্পের অগ্রগতিতে অন্তরায় ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড’

• দেশে বছরে প্রায় ৩০ কোটি স্কয়ার ফুট চামড়া উৎপাদন হয়• এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় পিছিয়ে ট্যানারিগুলো• দেশে চামড়ার বাজার প্রায় সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার• আমদানি হয় মাসে ১০-১২ লাখ স্কয়ার ফুট চামড়া

Advertisement

২২ স্কয়ার ফুটের একটি গরুর চামড়া থেকে ৮ থেকে ১০ জোড়া উন্নত মানের জুতা তৈরি করা সম্ভব। স্থানীয় বাজারে যার দাম ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ওই জুতা রপ্তানি করলে বাজারমূল্য দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকারও বেশি। দেশে প্রায় ৩০ কোটি স্কয়ার ফুট চামড়া উৎপাদন হচ্ছে প্রতি বছর। এরপরেও চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে যত প্রশ্ন।

এ নিয়ে খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। তারা জানান, স্থানীয় বাজারে চামড়ার ভালো পণ্যের চাহিদা কমেছে। ক্রমাগত উৎপাদন বাড়লেও নিম্নমান ও কৃত্রিম চামড়ার আমদানি হচ্ছে প্রচুর। এছাড়া চামড়া খাতের বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে ট্যানারিগুলো। ফলে চামড়া রপ্তানি করতে হচ্ছে অর্ধেক দামে।

আমরা বছরে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ চামড়া রপ্তানি করতে পারি। এ পরিমাণ আগে আরও বেশি ছিল। বিগত প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে দিন দিন কমছে।- বিটিএর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সাখাওয়াত উল্লাহ

Advertisement

একই সঙ্গে বড় বড় দেশের ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে শুধু চীননির্ভর হয়ে গেছে চামড়া খাত। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের চামড়া খাতের দুরবস্থা কাটছে না। এছাড়া সাভার চামড়া শিল্প নগরীর বেশকিছু অসুবিধা এখনো রয়ে গেছে।

দেশে কত চামড়া উৎপাদন হয়

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য বলছে, দেশের অভ্যন্তরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বা সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার। চামড়া প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত ২৫০টির বেশি ট্যানারি। চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী বড় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯০টির মতো।

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় বিপুল অংকের রপ্তানি আয় হারাচ্ছে দেশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য মিলিয়ে বছরে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হারাচ্ছে বাংলাদেশ।- বিটিএ সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ

দেশে সারা বছর যে পরিমাণে চামড়ার জোগান থাকে, তার অর্ধেক আসে কোরবানির ঈদে। এবার ঈদে প্রায় ৯১ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ পিসের কাছাকাছি চামড়া সবমিলিয়ে সংগ্রহ করবে ট্যানারিগুলো। পাশাপাশি পুরো বছর মিলে প্রায় দেড় কোটি পিসের বেশি চামড়া সংগ্রহ হবে।

Advertisement

এসব পশুর চামড়া থেকে পাওয়া যাবে প্রায় ২৯ থেকে ৩০ কোটি স্কয়ার ফুট প্রক্রিয়াজাত চামড়া বা ফিনিশড লেদার।

কতটুকু রপ্তানি হবে?

ট্যানারি শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) তথ্য বলছে, বছরে প্রায় ৩০ কোটি স্কয়ার ফুট চামড়ার মধ্যে ২০ কোটি স্কয়ার ফুট চামড়া রপ্তানি হচ্ছে।

২০১৭ সালে ট্যানারিগুলো সরকার বাধ্য করেছিল সাভারের ট্যানারি পল্লিতে যেতে। সেখানে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিপূর্ণ কমপ্লায়েন্স হওয়া। কিন্তু সরকার সেটা পারেনি। এ কারণে এলডব্লিউজি সনদ মিলছে না। রপ্তানির সম্ভাবনাও কাজে লাগানো যাচ্ছে না।-বিএফএলএলএফইএ সহ-সভাপতি এম এ আউয়াল

বিটিএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সালমা ট্যানারির মালিক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বছরে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ চামড়া রপ্তানি করতে পারি। এ পরিমাণ আগে আরও বেশি ছিল। বিগত প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে দিন দিন কমছে।’

এদিকে রপ্তানি চামড়ার অর্ধেকের বেশি যাচ্ছে চীনে। চামড়া রপ্তানিতে চীনের পরের অবস্থান ইতালি, স্পেন, ভিয়েতনাম, হংকং, জাপান ও ভারতের। একসময় আমেরিকা ও কোরিয়ান ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে চামড়া নিতো। এখন তা সনদ না থাকায় হাতছাড়া হয়ে গেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যও বলছে, প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে বেশ দীর্ঘ সময়।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে রপ্তানি। এর মধ্যে করোনা অতিমারির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানিতে আরও বড় ধস নামে। ওই বছর মাত্র ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।

এরপর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ডলারের রপ্তানি হলেও পরে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফের কমে যায়। এই দুই বছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে যথাক্রমে ১১৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার ও ১০৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ১০৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।

তবু আমদানি

বাংলাদেশে চামড়া উৎপাদন বাড়লেও দিন দিন কমছে রপ্তানি। উল্টো ভালো মানের চামড়াজাত পণ্য তৈরির জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে কিছু চামড়া। বাংলাদেশের ফুটওয়্যার কোম্পানিগুলো প্রত্যেক মাসে আনুমানিক গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ স্কয়ার ফুট চামড়া বিদেশ থেকে আমদানি করছে।

আরও পড়ুন ৩৫ বছর পর কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ সরবরাহ কমায় চামড়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনিশ্চয়তা সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি ৮৯ শতাংশ চামড়া চট্টগ্রামে বিক্রি করতে না পেরে ডাস্টবিনে চামড়া

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আমদানি করা হয়, যা এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা।

মূলত এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতা তৈরির জন্য ওইসব চামড়া আমদানি হচ্ছে। অর্থাৎ, ইউরোপসহ অনেক দেশে জুতাসহ বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া কারখানার চামড়া ব্যবহারের শর্ত থাকে। এ কারণে বিদেশ থেকে ওইসব চামড়া আনা হয়।

বিটিএ সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ বলেন, ‘বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় বিপুল অংকের রপ্তানি আয় হারাচ্ছে দেশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য মিলিয়ে বছরে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হারাচ্ছে বাংলাদেশ।’

কম দামে চামড়া নিয়ে যাচ্ছে চীন

বিশ্বের চামড়াজাত পণ্যের বড় বড় ব্র্যান্ড ইউরোপ-আমেরিকার। সেসব ব্র্যান্ডের ক্রেতারা চামড়া কেনার সময় এর মান, ট্যানারিগুলোর পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক রয়েছে কি না তা সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। থাকা লাগে এলডব্লিউজি সনদ। সেই পূর্ণাঙ্গ সনদ আছে দেশের মাত্র পাঁচটি ট্যানারির। বাকি দেড় শতাধিক ট্যানারি উন্নত দেশে চামড়া রপ্তানি করতে পারছে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কম দামে চামড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছে চীনের কোম্পানিগুলো। চীন এই সনদ এত গুরুত্ব দেয় না।

সাখাওয়াত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু কমপ্লায়েন্স ইস্যু ঠিক না থাকার কারণে আমরা বাধ্য হয়ে চীনের সিন্ডিকেট মার্কেটে পড়ে থাকছি। বিশ্বব্যাপী অবারিত উৎস থাকার পরও সেটা কাজে লাগাতে পারছি না। ফলে বড় বাজার ধরতে ব্যর্থ হচ্ছি। আবার স্থানীয় বাজারেও চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।’

তাজিন লেদার করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান চীন ও ইউরোপের বাজারের তুলনা করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেখানে ইউরোপে প্রতি বর্গফুট চামড়া দুই ডলার ৮০ সেন্ট (১০০ সেন্ট=১ ডলার), সেটা চীনে ৯০ সেন্ট থেকে ১ ডলার ২০ সেন্টে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা অর্ধেক চামড়া চীনে দিচ্ছি। তাহলে আমাদের লোকসান কী পরিমাণ হচ্ছে সেটা সহজে অনুমান করা যায়।’

ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার বড় বড় ব্র্যান্ড চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য নিয়েছে। এরপর এলডব্লিউজির কারণে এসব ক্রেতা পণ্য নিচ্ছে না।

শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চ্যালেঞ্জের মূল কারণ দেশের ট্যানারিগুলো। তারা এখনো বলছে, সাভার চামড়াশিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) না থাকার কারণেই স্থানীয় ট্যানারিগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করতে পারছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বৈশ্বিক চামড়াশিল্পের কাঁচামালের যে চাহিদা, তার প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। তবে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বৈশ্বিক মোট রপ্তানির মাত্র দশমিক ৭ শতাংশ। এ চামড়া রপ্তানি না বাড়লে ও রপ্তানিকারকরা উন্নত দেশ থেকে ভালো দাম না পেলে দেশের অভ্যন্তরেও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা কঠিন।’

বড় বড় ক্রেতা নেই

২০০৫ সালে নাইকি, অ্যাডিডাস, টিম্বারল্যান্ডের মতো কয়েকটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ও জুতা উৎপাদনকারী মিলে এলডব্লিউজি গঠন করে। পরিবেশ সুরক্ষা করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করার বিষয়টি নিশ্চিত করাই সংস্থাটির লক্ষ্য। বর্তমানে বিশ্বে এক হাজারের বেশি ব্র্যান্ড ও সরবরাহ খাতের প্রতিষ্ঠান এলডব্লিউজির সদস্য। ওইসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে চামড়া নিচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশে সনদ পাওয়া ট্যানারি হচ্ছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, রিফ লেদার, এবিসি লেদার, সুপারেক্স লেদার ও এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ। এর বাইরে আরও ১৪২টি ট্যানারির কেউ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানে চামড়া দিতে পারছে না।

এ কারণে বাংলাদেশ থেকে তুলনামূলকভাবে কম দামে প্রক্রিয়াজাত বা আংশিক প্রক্রিয়াজাত চামড়া কিনে কিছুটা মূল্য সংযোজন করে পুনরায় তা বিক্রি করছে চীনসহ কয়েকটি দেশ। এসব চামড়া তারা ২ দশমিক ২৫ ডলারেও বিক্রি করে, যা বাংলাদেশের বিক্রিত দামের কয়েকগুণ।

এসেন্সর ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশফিকুর রহমান মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের চামড়ার যে মার্কেট এটা আসলে ফিক্সড কিছু এজেন্টের সঙ্গে বলা যায়। আমাদের বড় বড় ক্রেতা নেই। এসব চীনের এজেন্ট যা দাম দিচ্ছে, তাতেই চামড়া দিতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।’

আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, চীনা বিভিন্ন এজেন্ট এ দেশে আবাসিক অফিস খুলেছে। যারা ট্যানারি থেকে শুরু করে আড়ত পর্যন্ত নিয়মিত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা এখন শুধু একচেটিয়া ক্রেতা। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে যোগসাজশের মাধ্যমে অল্প দামে চামড়া কিনছে।

কম্পায়েন্সের বিকল্প নেই

সাভারের বিসিক চামড়াশিল্প নগরে ২০৫টি বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। সেখানে অনুমোদিত ট্যানারির সংখ্যা ১৬২টি। বর্তমানে চালু রয়েছে ১৪২টি। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানেরও রপ্তানি সনদ নেই।

পরিবেশ দূষণ রোধে ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগর স্থাপনের কাজ শুরু হয়। যেখানে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১১শ কোটি টাকা। প্রায় ২২ বছর অতিবাহিত হলেও এটি এখনো পুরোপুরি কার্যকরী শিল্পনগরী হয়ে ওঠেনি। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১২ সালে। সেটি নির্মাণের পর পুরোপুরি চালু না করেই ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয় হেমায়েতপুরে। এখনো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ফলে সৃষ্ট তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, লবণ বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা এবং সাধারণ ক্রোমিয়াম পুনরুদ্ধার ইউনিট স্থাপনে তেমন অগ্রগতি হয়নি সেখানে।

সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারি মালিকরা জানান, সিইটিপির তরল বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার ঘনমিটার। কোরবানির পর ট্যানারিগুলো পুরোদমে চামড়া প্রক্রিয়াজাত শুরু করলে তখন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়, যা সিইটিপির সক্ষমতার অনেক বেশি। এটা এ খাতের কমপ্লায়েন্সের বড় বাধা। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানের এলডব্লিউজি সনদের শর্ত পূরণ করার সক্ষমতা হলেও সিইটিপি সংক্রান্ত কারণে তারা পিছিয়ে।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সহ-সভাপতি ও ভুলুয়া ট্যানারির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৭ সালে ট্যানারিগুলোকে সরকার বাধ্য করেছিল সাভারের ট্যানারি পল্লিতে যেতে। সেখানে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিপূর্ণ কমপ্লায়েন্স হওয়া। কিন্তু সরকার সেটা পারেনি। এ কারণে এলডব্লিউজি সনদ মিলছে না। রপ্তানির সম্ভাবনাও কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, বর্তমান সরকার ট্যানারি শিল্পের উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগে এ শিল্পনগরী নিয়ে নানান বিশৃঙ্খলা হয়েছে। যে কারণে এখন এ শিল্পের বর্তমান দুর্দশার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে তাদের তলব করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ট্যানারির কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার আধুনিকীকরণের নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে।

এনএইচ/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস