ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- ফরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে ১৩ হাজার কেজি ওজনের জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোমা হামলা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার প্রভাবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে।
Advertisement
রোববার (২২ জুন) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। ডিএসইতে লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে চলে এসেছে।
রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ে। লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই এ নিয়ে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে চলে নানা গুঞ্জন। ফলে লেনদেনের শুরুতেই বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ে। এতে লেনদেন শুরু হতেই সূচকের বড় পতন হয়। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত।
এ বিষয়ে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যে এক যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে গেছে। ফলে এই যুদ্ধ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করছে। এতে সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই আতঙ্কের জেরেই বাজারে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপ সৃষ্টি হয়। তার ফলেই এমন দরপতন হয়েছে।
Advertisement
তবে ডিএসইর আরেক সদস্য বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের শেয়ারবাজারে মন্দা বিরাজ করছে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এখন অবমূল্যায়িত অবস্থায়। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে বড় দরপতন স্বাভাবিক ঘটনা না।
তিনি বলেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কারণে ছড়িয়েপড়া আতঙ্ক থেকেই আজ এমন দরপতন হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি প্যানিক হয়ে গেছেন। বিনিয়োগকারীরা প্যানিক না হলে বাজারে এত বড় পতন হতো না। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কগ্রস্ত না হলে শিগগির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
এদিকে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ১৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৬৫টির। আর ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৬ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
Advertisement
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে ২৭১ কোটি ৭০ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩০৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে লাভেলো আইসক্রিমের। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকার। ৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ফাইন ফুডস, উত্তরা ব্যাংক, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সিটি ব্যাংক, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৭১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৩টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
এমএএস/ইএ/জেআইএম