আইন-আদালত

সচিবালয়ের সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

সচিবালয়ের সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার প্রতি তোয়াক্কা না করে আন্দোলন করায় সচিবালয়ের সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে।

Advertisement

জনস্বার্থে রোববার (২২ জুন) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এসএম আরিফ মন্ডল। রিটে গণমাধ্যমে বিভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়েছে।

রিটে সচিবালয়সহ দেশের সব সরকারি অফিসে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার-১৯৭৯ এর ২৯ এর (ডি) (রোমান-২), ৩০ ,৩০ (এ) এবং বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩৮ এর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সব অনিবন্ধিত সংগঠনের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা বা নিবন্ধিত সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল চাওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে সংগঠনগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের বিষয়ে পদেক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন মহাপরিচালক (ডিজি), সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও যৌথ মূলধন কোম্পানি এবং ফার্মসমূহের পরিদপ্তর রেজিস্ট্রার এর) নিষ্ক্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

সোমবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা

রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব (জনপ্রশাসন বিভাগ), শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন মহাপরিচালক (ডিজি), সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও যৌথ মূলধন কোম্পানি এবং ফার্মসমূহের পরিদপ্তর রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়েছে।

এর আগে সচিবালয়ের সব সংগঠন বাতিলের দাবিতে গত ১ জুন সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আইনজীবী এসএম আরিফ মন্ডল। সেখানে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।

নোটিশে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সাতদিনের সময় বেঁধে দিয়ে বলা হয়, অন্যথায় রিট আবেদন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ এ রিট আবেদন করা হলো।

Advertisement

নোটিশে বলা হয়, গত ২৫ মে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ নম্বর ২৬ এর মাধ্যমে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর অধিকতর সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ নামে জারি করা হয়।

অধ্যাদেশে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এ ৩৭ক সংযোজিত। ওই বিধান মোতাবেক সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান প্রবর্তন করা হয়। সংশোধনী আইন জারি হলে বাংলাদেশ সচিবালয়সহ মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মস্থলে কর্মচারীদের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে গঠিত কথিত সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সদস্যরা সবাই একসঙ্গে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলে।

ওই ফোরামের প্ররোচণায় সচিবালয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। জাতীয় দৈনিকে ২৬ মে শিরোনাম সচিবালয় বিক্ষোভ দিনভর অচল ছিল এনবিআর, নগর ভবনে তালা প্রতিবেদন অনুযায়ী শত শত কর্মচারী দপ্তর ছেড়ে মিছিলে যোগ দেন। মিছিল থেকে ‘অবৈধ কালো আইন মানবো না, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।

সচিবালয়সহ সারাদেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন যেসব অফিস রয়েছে সেখানকার কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত স্বনামে বা রাজনৈতিক দলের ব্যানারে সংগঠন/ফোরাম/পরিষদ/দল গঠন করে তাদের কার্যক্রম সরকারি কর্মচারীর (আচরণ) বিধিমালা -১৯৭৯ প্রতি তোয়াক্কা না করে পরিচালনা করে আসছে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত থাকে। আবার কিছু সংগঠন নতুন করে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ বিবেচনায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।

আরও পড়ুন

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে: আইন উপদেষ্টা ইশরাক হোসেন ফৌজদারি অপরাধ করেছেন: আসিফ মাহমুদ

নোটিশে আরও বলা হয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় সচিবালয়সহ সারাদেশে সংগঠনগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। সংগঠনগুলো বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা-১৮৯ অনুযায়ী মহাপরিচালক, রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়নস, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ- ১৯৬১ ও বিধি-১৯৬২ আওতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছে।

সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথিত মিটিং, মিছিল,গণমাধ্যমে জারিকৃত আইনের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেওয়ার ফলে জনশৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে। যা সারাদেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অযাচিতভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। জারি করা অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে মিটিং, মিছিল, মানববন্ধন, বক্তৃতা, বিবৃতি ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি চাকরি বিধিমালা আইন-১৯৭৯ ভঙ্গ করা নিয়মে পরিণত করছেন।

সেখানে আরও বলা হয়, সারাদেশে সরকারি চাকরির আচরণবিধি ভঙ্গ করার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যার ফলে সিভিল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কথিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনগুলোর নিবন্ধন এবং তাদের চলমান আন্দোলন, মিটিং, মিছিল, সমাবেশ করা বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩৮ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস