দেশজুড়ে

নারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ২

নারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ২

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২১ জুন) দিনগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

নিহতরা হলেন, কুদ্দুস মিয়া (৬০) ও মেহেদী হাসান (৪২)। কুদ্দুস মিয়া বন্দরের হাফেজীবাগ এলাকার মৃত সাদেক আলীর ছেলে ও মেহেদী হাসান শাহী মসজিদ এলাকার মৃত আব্দুল জলিল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান।

কুদ্দুস মিয়া পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি এবং মেহেদী বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক।

গ্রেফতাররা হলেন- বন্দর উপজেলার হাফেজীবাগ এলাকার নান্নু মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬), আলমচানের ছেলে রবিন (২৬) ও সেলিম চৌধুরীর ছেলে সোহেল চৌধুরী (২৮)।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ইজিবাইক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য (বহিষ্কৃত) হান্নান সরকার এবং বিএনপির কিছু নামধারীদের মধ্যে কয়েকমাস ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে বিএনপির নামধারীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়।

এদের মধ্যে একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রনি ও জাফর এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান, বাবু সিকদার, বাবু ওরফে জুয়ারি বাবু ও শ্যামল। কয়েকদিন আগে চুরির টিন বিক্রি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। শুক্রবারও এ নিয়ে তাদের দুপক্ষের মারামারিতে অন্তত আটজন আহত হন।

এর জেরে গত শনিবার বিকেলে উভয়পক্ষ শাহী মসজিদ, বন্দর রেললাইন ও হাফেজীবাগ এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেন। রাতে বন্দর রেললাইন এলাকায় আব্দুল কুদ্দুসকে সড়কের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত কুদ্দুসের ছেলে পারভেজ রনি ও জাফর গ্রুপের সদস্য। পারভেজকে খুঁজতে এসে না পেয়ে তার বাবাকে ছুরিকাঘাত করে।

কুদ্দুসের ছোটভাই দুদু মিয়া বলেন, বড়ভাই চায়ের দোকানে ছিলেন। তাকে ডেকে নিয়া পারভেজের কই জানতে চায়। পরে তারা ভাইকে এলোপাথাড়ি ছুরি দিয়া আঘাত করে। আমরা মরদেহ হাসপাতালে পাইছি।

Advertisement

এদিকে আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয় এলাকায়। টহলে ছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রনি ও জাফর গ্রুপের লোকজন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসানকে ধরে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় একটি ক্লাবের সামনে নিয়ে গিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার।

মেহেদীর দুলাভাই মাহফুজুল হক সৌরভ বলেন, যখন মার্ডার হয় তখন মেহেদী বাড়িতে ছিলেন। মার্ডারের পর প্রতিপক্ষের লোকজনকে খুঁজতে গেলে রাস্তায় মেহেদীকে পেয়ে যায়। তখন মেহেদীকে তুলে নিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে পিটিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

এ ব্যাপারে সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য (বহিষ্কৃত) হান্নান সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষে ঘটনায় দুজন মারা গেছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। রাতে র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে অন্তত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে এবং যারা এর নেপথ্যে আছেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/আরএইচ/জিকেএস