অনলাইনে গেলেই বিভিন্ন লাইফ কোচ আর মোটিভেশনাল স্পিকারদের মুখে শোনা যায় – ‘নিজেকে খুঁজুন, নিজের মতো করে বাঁচুন।’ কালে কালে বিভিন্ন দার্শনিকরাও বলে গেছেন এমন কথা। কিন্তু কী এই নিজের মতো করে বাঁচা? কেন এটি এত জরুরি?
Advertisement
‘নিজের মতো করে’ মানে হলো নিজের স্বাভাবিক, আসল রূপে বেঁচে থাকা। এটি হলো আপনার নিজের মতো করে ভাবা, নিজের পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী চলা এবং সত্যিকার অর্থে যা অনুভব করেন তা প্রকাশ করা। অন্যরা কী বলবে বা কী ভাববে সেই চিন্তা না করে যদি আপনি নিজের মনের কথা বলেন, নিজের পছন্দের জামা-কাপড় পরেন, নিজের মতো করে জীবন কাটান - সেটাই হলো 'নিজের মতো করে বাঁচা'। এতে কোনো ভয় বা সংকোচ নেই, কারণ এই পৃথিবীতে আপনার মতো একজনই আছে! ভুল করলেও সমস্যা নেই, সেটা আপনাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। যখন আপনি সত্যিকার অর্থে নিজের মতো থাকবেন, তখনই আপনি সবচেয়ে সুখী ও আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন। মনে রাখবেন, অন্যেরা যা-ই বলুক না কেন, তোমার নিজের সত্ত্বাটাই সবচেয়ে মূল্যবান। সহজ ভাষায়, 'নিজের মতো থাকা' মানে নিজেকে ভালোবাসা এবং নিজের স্বকীয়তাকে উদযাপন করা।
আজ (২২ জুন) আন্তর্জাতিক নিজের মতো করে বাঁচা দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল বিয়িং ইউ ডে। ই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে নিজের মতো করে বাঁচা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি উদযাপনের মাধ্যমে আমরা শিখি নিজের স্বকীয়তাকে মূল্য দিতে, সমাজের চাপে নিজেকে না বদলাতে। দিনটির উদ্দেশ্য হলো সবাইকে নিজের স্বপ্ন, আবেগ এবং ব্যক্তিত্ব মুক্তভাবে প্রকাশ করতে উৎসাহিত করা। বিশ্বজুড়ে মানুষ এই দিনে নিজেদের সত্যিকারের রূপটি উদযাপন করে, ভয় ও সংকোচ কাটিয়ে উঠে।
নিজের মতো করে বাঁচার জন্য আগে আপনার নিজেকে বুঝতে হবে, নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে। যুগ যুগ ধরে বহু সাধক-ঋষি নিজেকে খুঁজতে খুঁজতে জীবন পার করে দিয়েছে, আর আমি হঠাৎ নিজেকে বুঝবো কীভাবে – এমন কিছু ভাবছেন কি?
Advertisement
তবে শুনুন, আধ্যাত্মিক খোঁজ একটি অতি গভীর সাধনা, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে নিজের স্বকীয়তাকে বোঝার বিষয়টি এতো জটিল না। এ জন্য আপনি সহজ কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করলেই আপনার সামনে অনেকগুলো চিন্তার দরজা খুলে যাবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক নিজেকে বোঝার ৮টি সহজ পদ্ধতি-
১. আবেগ বিশ্লেষণ: বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনার মানসিক প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করুন। কেমন পরিবেশে আপনি কী ধরণের আবেগ অনুভব করেন? এতে আপনার ভেতরে কেমন অনুভূতি তৈরি হয়? আপনার প্রতিক্রিয়াগুলো কেমন? অন্যের প্রতিক্রিয়াকে আপনি কীভাবে গ্রহণ করছেন? এই বিষয় গুলো চিন্তা করার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যক্তিত্বকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
২. পছন্দের তালিকা: আপনি কোন কাজে আনন্দ পান, কোনটি অপছন্দ - তা লিখে ফেলুন। নিজের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে সচেতন থাকলে আপনি নিজেকে আরো ভালো বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
৩. একান্ত সময়: নিয়মিত কিছু সময় নিজের সঙ্গে কাটান। অন্যদের চাহিদা, মন্তব্য ইত্যাদির বাইরে শুধু নিজের সঙ্গে একলা সময় আপনাকে গভীর চিন্তা পরিবেশ তৈরি করে দিবে।
Advertisement
৪. ডায়েরি লেখা: মনের ভাবনা লিখে ফেললে অনেক বিষয় স্পষ্ট হয়। এমন অনেক ঘটনা ঘটে জীবনে, যা আপনার মধ্যে তীব্র কিছু অনুভূতি তৈরি করে। তখন আবেগের বশে অনেক কিছু বুঝে ওঠা কঠিন হয়। কিন্তু আপনি যদি সে বিষয়টি গুছিয়ে লিখতে শুরু করেন, তখন আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আরো বিস্তৃত হয়।
৫. নির্মোহ প্রতিক্রিয়া: কাছের মানুষের কাছ থেকে আপনার গুণাবলী সম্পর্কে জানুন। আপনার খারাপ-ভালো সব বিষয়েই শুনুন। তারপর নিজের প্রতি পক্ষপাতদুষ্টতা না দেখিয়ে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন।
৬. ভুল থেকে শিক্ষা: প্রতিটি ভুলকে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখুন। ভুল ধামাচাপা দেওয়ার মাধ্যমে আপনি নিজের মিথ্যা একটি ছবি আন্যকে দেখাতে চান। তা না করে নিজের ভুলকে নিজের কাছে আগে স্বীকার করুন। তাহলেই নিজেকে বুঝতে পারবেন।
৭. নতুন অভিজ্ঞতা: বিভিন্ন কাজ করে আপনার যোগ্যতা খুঁজে বের করুন। মনে মনে চিন্তা করে অনেক সময় আপনি নিজের সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন না। তাই প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিন, তা বিশ্লেষণ করুন।
৮. সীমানা নির্ধারণ: আপনার স্বাচ্ছন্দ্য সীমা বুঝে নিন। কতোটা ইয়ার্কি, কোন কোন বিষয়ের আলোচনা, কেমন পরামর্শ আপনি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন, তা বোঝার চেষ্টা করুন। তারপর সম্মানের সঙ্গে আপনার সিদ্ধান্ত অন্যকে জানান যদি কেউ সেই সীমা লঙ্ঘন করে।
মনে রাখবেন, নিজেকে বোঝা এবং নিজের মতো করে বাঁচা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রতিদিন নিজের সঙ্গে এই সংযোগ গড়ে তুলুন, দেখবেন জীবন আরও অর্থবহ হয়ে উঠবে। তবে অবশ্যই নিজের মত প্রকাশ করা মানেই অন্যের অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করা নয়। সমঝোতা বা ধৈর্য কোনো খারাপ বিষয় নয় যদি তা আপনার নির্ধারিত সীমা আতিক্রম না করে।
এএমপি/জিকেএস