রাজনীতি

দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নারী নেত্রীদের টার্গেট করা হয়

দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নারী নেত্রীদের টার্গেট করা হয়

দেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী। রাজনীতিতে নারীদের চ্যালেঞ্জও কম নয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বুলিংয়ের শিকার হতে হয় তাদের।

Advertisement

রাজনীতিতে নারীদের চ্যালেঞ্জ, দায়িত্ব, টিকে থাকার বাস্তবতা ও সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মো. নাহিদ হাসান।

জাগো নিউজ: নারীদের রাজনীতি বর্তমানে কতটা চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে?

হুমায়রা নূর: রাজনীতিতে যোগ দেওয়া আমরা বেশিরভাগ নারীই একেবারে সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা। কেউ পেশাজীবী কেউ গৃহিণী। জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরাই প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছিল। সে আকাঙ্ক্ষা থেকেই রাজনীতিতে আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে যখন ছাত্রীরা বের হয়ে আসে তখন জুলাই আন্দোলন অন্য রূপে মাত্রা নিয়েছিল। এখন রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি।

Advertisement

আমরা একটি আস্থার জায়গা তৈরি চেষ্টা করছিলাম, ঠিক তখনই প্রতিপক্ষরা আমাদের নোংরাভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। এই নোংরা অপচেষ্টা খুবই দুঃখজনক

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য প্রথমে আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যোগ দেই। এরপর রাজনীতিতে আগ্রহী হলে মোট ২৪ জন নারী এনসিপিতে যোগ দিয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আমাদের নাম ঘোষিত হলো এরপর থেকেই নারীদের নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। একেকজনকে টার্গেট করে এসব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা অন্য কোনো দলের রাজনীতি নষ্ট করার জন্য আসিনি, আমাদের প্রচেষ্টা ছিল নারীদের উৎসাহিত করে প্রথম সারিতে নিয়ে আসা। আমরা একটি আস্থার জায়গা তৈরি চেষ্টা করছিলাম, ঠিক তখনই প্রতিপক্ষরা আমাদের নোংরাভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। এই নোংরা অপচেষ্টা খুবই দুঃখজনক।

আরও পড়ুনবিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব স্পষ্ট হচ্ছে এনসিপিরবিএনপি ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টার দিকে এগোচ্ছে‘অন্তর্কোন্দল প্রকাশের ভয়ে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না’ভাইরাল স্ক্রিনশট ও কনভারসেশন আমার না: সারোয়ার তুষার

সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নারীবান্ধব না। দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নারীকে টার্গেট করা হয়। এটি দুঃখজনক। কখনো এমন হয় যে নারীকে ভিকটিম সাজিয়ে দলকে ছোট করার চেষ্টা করা হয়। কখনো নারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়। আসলে ওই জায়গাটাতে কাজ করা প্রয়োজন যেখানে নারীরা নিরাপত্তা বোধ করবে যে, রাজনীতিতে শুধু প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে নোংরা আক্রমণের শিকার হবো না। আমাকে ব্যবহার করে কেউ নোংরা রাজনীতি করবে না।

জাগো নিউজ: আপনার কাছে কি মনে হচ্ছে যে এনসিপির নারী নেত্রীরা সাইবার বুলিং টার্গেটের শিকার হচ্ছে?

Advertisement

হুমায়রা নূর: আমাদের দলে যে কয়জন নারী নেত্রী আছে আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে এই জিনিসটা ফেস করেছি যে, আমরা কোনো না কোনো জায়গা থেকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও অপপ্রচারের শিকার হয়েছি। এগুলো এমন ধরনের নোংরা অপপ্রচার যেগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে সহ্য করা প্রায় অসম্ভব। আমাদের অনেক নেত্রীর নিজস্ব পেশা আছে, তারা যার যার জায়গায় ডিগনিফাইড লাইফ লিড করে। আমার পরিবারে আমার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা হয় এবং এটা আমি আমার কাজের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করি। শুধু রাজনীতি করতে আসার কারণে আমরা অপপ্রচারের শিকার হচ্ছি।

জাগো নিউজ: দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের, বিশেষ করে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। এতে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়ে। আপনার কি মনে হয় নারীদের রাজনীতিতে আসা সহজ আবার প্রস্থানও সহজ?

হুমায়রা নূর: এই কঠিন পথকে সহজ করার জন্যই আমরা রাজনীতিতে এসেছি। নারীদের জন্য রাজনীতির পথটা সহজ করার জন্যই আমাদের রাজনীতিতে আসা। কিন্তু রাজনীতিতে এরকম নোংরা হেনস্তার শিকার হতে হবে এটা ধারণার বাইরে ছিল। তবে আমি বলবো, কিছু ক্ষেত্রে নারীদের একটু দায়িত্বশীল আচরণ করা জরুরি এজন্য যে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীকেই আরেকজন নারীর পাশে দাঁড়ানো উচিত।

রাজনীতিতে এরকম নোংরা হেনস্তার শিকার হতে হবে এটা ধারণার বাইরে ছিল। তবে আমি বলবো, কিছু ক্ষেত্রে নারীদের একটু দায়িত্বশীল আচরণ করা জরুরি এজন্য যে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীকেই আরেকজন নারীর পাশে দাঁড়ানো উচিত

একজন নারী হিসেবে আরেকজন নারীর ব্যাপারে কুৎসা রটনা করা যেমন উচিত না, আবার নারী হিসেবে নিজেকে এমন কোনোকিছুতে জড়ানো উচিত না যাতে আমার কারণে অন্য ১০ জন নারী প্রশ্নবিদ্ধ হয়। একজন নারী হিসেবে আরেকজন নারীর পাশে এজন্য দাঁড়ানো উচিত, যাদের কেউ চাইলে আমাদের মনোবল ভেঙে ফেলতে না পারে।

জাগো নিউজ: সম্প্রতি আপনাদের দলের এক নেতার কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। দলীয়ভাবে আপনার বিব্রত কি না?

হুমায়রা নূর: ব্যক্তিগতভাবে আমি ভীষণভাবে বিব্রত। আপনার দেখেছেন এই কল রেকর্ড ফাঁসের ঘটনায় আমাদের দলের একজন নেত্রীকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি এনসিপির নারী এবং আইন সেলে কাজ করছি। একজন নারী যদি আমার কাছে এসে তার কষ্টের কথা শেয়ার করতো, সে যেন এখানে এসে নিরাপত্তাবোধ করে সেটি নিশ্চিত করতাম। কিন্তু তিনি দলের সমর্থক হয়ে দলকে হয়তো ধারণ করতে পারেননি বলে তিন মাসেও দলের কাউকে কিছু না জানিয়ে জানিয়েছেন বহিঃশত্রুদের, যারা এই সংবেদনশীল বিষয়টিকে বরং রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আমি দলের সব নারী নেত্রী, কর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট করতে চাই, আমরা আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করতে রাজনীতি করতে এসেছি, আপনাদের সঙ্গে কোনো অন্যায় হলে তা নিঃসংকোচে আমাদের জানাবেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি, থাকবো।

এনএস/এএসএ/জেআইএম