জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান অপসারণসহ ৪ দাবি জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। দাবি আদায় না হলে আগামী শনিবার (২৮ জুন) থেকে এনবিআরের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
Advertisement
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের মহাসচিব, অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা ও সভাপতি নীরিক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মূল্য সংযোজন করের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাছান মুহম্মদ তারেক উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে অপসারণের দাবিতে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ঐক্য পরিষদ।
Advertisement
পরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছাকে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, চেয়ারম্যান এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে তাদের পূর্বঘোষিত ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করার উদ্যোগ ভেস্তে দিচ্ছেন।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে সভা সমাবেশ করতে বাধা প্রদান ও ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে কমিটি করার অভিযোগ আনা হয় এতে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি কমিটি গঠন বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনাও করা হয়নি।
Advertisement
যে রাজস্ব অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে এতদিন কর্মসূচি চলেছে, তা জারি হওয়ার পর যে বা যারা একে স্বাগত জানিয়ে পত্রিকায় ও ফেসবুকে বক্তব্য দিয়েছিলেন, এমন বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও অধ্যাদেশ সংশোধনের বিরোধী-মনোভাবসম্পন্ন এনবিআরের সদস্যদেরকে গঠিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে, যাতে সবকিছু চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোক দিয়ে সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনবিআর চেয়ারম্যান সম্প্রতি বদলি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কর বিভাগের সিনিয়র কমিশনারকে প্রতিহিংসামূলকভাবে নিপীড়নমূলক বদলি করেছেন। আবার, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য স্পর্শকাতর দপ্তরে প্রশ্নবিদ্ধ এক কর্মকর্তাকে কর কমিশনারের দায়িত্ব দিয়েছেন।
এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয় জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কারণ তিনি (এনবিআর চেয়ারম্যান) এটি বাস্তবায়ন হতে দেবেন না।, সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তিনি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করবেন।
সংগঠনের দাবির মধ্যে রয়েছে, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ, আজ ২৩ জুনের মধ্যে এরইমধ্যে জারিকৃত প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলির আদেশ বাতিল করতে হবে, প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক নতুন কোনো বদলি আদেশ জারি না করা, রাজস্ব অধ্যাদেশ সংস্কারবিষয়ক কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্ত করা ও প্রশ্নবিদ্ধদের বাদ দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জারিকৃত প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ আজকের বাতিল না করা হলে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ জুন) আন্তর্জাতিক যাত্রী সেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকাস্থ কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি এবং ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি, কলম বিরতি কর্মসূচি পালন এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে।
নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না করা হলে ও তৎপরবর্তী সময় প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক নতুন কোনো বদলি আদেশ জারি করা হলে আগামী ২৫ ও ২৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রী সেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে। আগামী ২৭ জুনের মধ্যে প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না করা হলে এবং এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণ না করা হলে আগামী ২৮ জুন থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রী সেবা ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।
গত মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচিতে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকারের তরফে বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অটল থাকেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তার বদলির আদেশকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে একে অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, এই বদলি কোনো স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত কূটপরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ, যা চলমান রাজস্ব সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের পক্ষের শক্তিকে দুর্বল করার অপচেষ্টা।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অংশগ্রহণ ছাড়া ফলপ্রসূ ও কার্যকর রাজস্ব সংস্কার নিশ্চিত করা যাবে না বলে সতর্ক করে সেই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের কোনো গ্রহণযোগ্যতা আমাদের পক্ষ থেকে কখনই স্বীকৃত হবে না।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের এই ধরনের ফ্যাসিস্ট আচরণ আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি।
এসএম/এসএনআর/জেআইএম