সাতক্ষীরার ভোমরা ইউনিয়নের বৈচনা গ্রামে অভিনব কায়দায় প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। ফুলের তোড়ায় হিপনোটিজ (সম্মোহন) করে বান্ধবীর ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল হাতিয়ে নিয়েছেন এক তরুণী। অভিযুক্তের নাম মোছা বিথি খাতুন। তিনি কালিগঞ্জ উপজেলার ইন্দ্রনগর গ্রামের মো. শামসুল হকের মেয়ে।
Advertisement
ভুক্তভোগী গৃহবধূ হালিমা খাতুন জানান, মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেল ৩টার দিকে তার পুরোনো বান্ধবী বিথি খাতুন মোবাইলে যোগাযোগ করে বেড়াতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরদিন বিকেলে বিথি একটি ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন এবং সেটি হালিমার হাতে তুলে দেন। কিছুক্ষণ পর আবার নিজেই তোড়াটি নিয়ে ফ্রিজে রেখে দেন।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, এরপর থেকেই গৃহিণী হালিমা খাতুন এক ধরনের মানসিক অস্পষ্টতা ও ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন। এ সময় তার স্বামী মিলন হোসেন অতিথিদের আপ্যায়নে বাড়ির বাইরে ব্যস্ত ছিলেন। সুযোগ বুঝে বিথি খাতুন ঘরের ভেতর ঢুকে আলমারি থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে নেন।
পরে বিথি জানান, তার জরুরি কাজে ঢাকায় যেতে হবে এবং তিনি আর বান্ধবীর বাড়িতে থাকবেন না। অতিথিদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক বিদায় নিয়ে তিনি চলে যান। যাওয়ার সময় হালিমার সন্তানের হাতে ১০০ টাকা দিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর সেই টাকা ঘরে রাখতে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা আলমারির দরজা খোলা দেখতে পান। তখনই তারা বুঝতে পারেন, ভেতরের সব মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া গেছে। ফ্রিজের সেই ফুলের তোড়াটিও সঙ্গে নিয়ে গেছেন ওই তরুণী।
Advertisement
পরিবার সূত্রে আরও জানা গেছে, ঘটনার পর বিথি খাতুনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ভুক্তভোগী হালিমা খাতুন সাতক্ষীরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
হালিমা খাতুনের স্বামী মিলন হোসেন বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি বিথির বাবা-মা বেঁচে নেই। তিনি নানার বাড়িতে বড় হয়েছেন। এর আগেও তিনি তার বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়ি থেকে এভাবে মালামাল নিয়ে পলাতক ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। একইসঙ্গে বিথি খাতুনকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছি।
ধারণা করা হচ্ছে, ফুলের তোড়ায় ‘স্কোপোলামিন’ নামের এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে। যা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ নামেও পরিচিত। এই কেমিক্যাল নাকে প্রবেশ করতেই ভুক্তভোগী নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং অপরাধীদের কথামতো কাজ করতে থাকেন। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগে।
Advertisement
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিমুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত চলছে।
আহসানুর রহমান রাজীব/এসআর/এমএস