গীতিকবি শিবলীকে অভিনন্দিত করছেন সবাই

তারকা গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলীকে অভিনন্দিত করছেন সবাই! নয় মাস না পেরোতেই নজরুল ইনস্টিটিউটে নিজের কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন তিনি। সেই কর্মতালিকা অভিভূত করছে তার অনুরাগী-অনুসারীদের।

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয়তম গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী। ধুকতে থাকা এই প্রতিষ্ঠানকে গত নয় মাসে অনেকটা এগিয়ে নিয়েছেন এই লেখক ও কবি। আজ (২৩ জুন) সোমবার ফেসবুকে নয় মাসের কাজের বিবরণ তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘নয় মাস খুব বেশি সময় নয়, আমার নেহাত কম সময়ও নয়। রুটিন কাজের বাহিরে আমার কিছু কাজের ফিরিস্তি সবার সাথে শেয়ার করলাম। আমার স্বপ্ন, নজরুল ইনস্টিটিউট হয়ে উঠবে আগামী বাংলাদেশের কালচারাল হাব। আমি সেই স্বপ্নের পানে ছুটছি।’কাজের ফিরিস্তিতে শিবলী তুলে ধরেছেন গুরুত্বপূর্ণ সব উদ্যোগ ও অর্জন সমূহ। সেসবের মধ্যে রয়েছে কবি নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে গেজেটভুক্ত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়। নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক জানান, এই ঘোষণার ভেতর দিয়ে কবির প্রতি রাষ্ট্রীয় সন্মানের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গণ-দাবিটি পূরণ হয়েছে।

লতিফুল ইসলাম শিবলীর হাত ধরে নাম বদলায় নজরুল ইনস্টিটিউটের। এটি এখন ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট’। তার হাত ধরে ইনস্টিটিউটে চালু হয়েছে পেনশন। আগে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অবসরকালে কেবল গ্র্যাচুয়িটি পেতেন। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম পেনশন চালু করলো প্রতিষ্ঠানটি।

শিবলীর কর্মযজ্ঞের তালিকায় রয়েছে, ইনস্টিটিউটের কোর্সসমূহে নতুন পাঠ্যক্রম ও নির্দেশিকা প্রণয়ন, গ্রন্থাগারের সময় বাড়িয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত বাড়ানো, জরাজীর্ণ মিলনায়তন সংস্কার ও নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানকে প্রাসঙ্গিক করে দেশব্যাপী ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের নজরুল’ শীর্ষক সিরিজ সেমিনার, দেশব্যাপী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় রচনা, হামদ-নাত ও সঙ্গীত প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা, নতুন করে নজরুলসংগীত স্বরলিপি প্রমাণিকরণ পরিষদের কমিটি গঠন, জার্নাল ও গবেষণার পান্ডুলিপি বাছাই, প্রকাশনা ও রিভিউ কমিটির পুনঃগঠন, প্রথমবারের মতো নজরুলের ‘রক অ্যালবাম’ এবং ‘রক কনসার্ট’ আয়োজন, ‘নজরুল পুরস্কার’ প্রদান এবং পুরস্কার হিসেবে রৌপ্য পদক প্রবর্তন, লাইব্রেরি আধুনিকায়ন ও অটোমশন, নজরুল রচনা সমগ্র ইংরেজিতে অনুবাদ, ইরান সরকারের কাছ থেকে নজরুল রচনা সমগ্র ফারসি ভাষায় অনুবাদের প্রতিশ্রুতি নেওয়া, ‘আপোসহীন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নজরুল’ প্রাসঙ্গিক করে ‘জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ’ বিষয়ে এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালুর প্রস্ততি।শিবলী লিখেছেন, ‘আমরা নজরুলকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই। তাই পৃথিবীর দেশে দেশে নজরুল সেন্টার স্থাপন করবো। এই লক্ষ্যে ফ্রান্সের প্যারিস ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নজরুল কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।’

লতিফুল ইসলাম শিবলী একাধারে কবি, গায়ক, মডেল, ঔপন্যাসিক, অভিনেতা। লিখেছেন নাটক ও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য। নাট্যকার হিসেবে তার লেখা প্রথম সাড়াজাগানো নাটক ‘তোমার চোখে দেখি’। নিজের লেখা নাটক ‘রাজকুমারী’তে মির্জা গালিবের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকজুড়ে ৪ শতাধিক গান লিখেছিলেন তিনি। আইয়ুব বাচ্চুর ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘সুখেরই পৃথিবী’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘মাকে বলিস’; জেমসের ‘জেল থেকে বলছি’, ‘প্রিয় আকাশী’, ‘বিবাগী’, ‘পালাবে কোথায়’, ‘মন্নান মিয়ার তিতাস মলম’, ‘গিটার কাঁদতে জানে’; তপন চৌধুরী-শাকিলা জাফরের ‘তুমি আমার প্রথম সকাল’; মাইলসের ‘পলাশীর প্রান্তর; সোলসের ‘হাজার বর্ষারাত’সহ তার লেখা বেশ কিছু গান সাড়া ফেলেছিল।

আরও পড়ুন:আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার দাবিতে ‘মুমূর্ষু সমাবেশ ও মুক্তির গান’ খ্যাতিমান গীতিকার শিবলী নজরুল ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব নিলেন 

দীর্ঘ সময় ফেরারী থাকার পর আরও গতি নিয়ে ফিরেছিলেন শিবলী। লিখেছেন একের পর এক উপন্যাস। তার লেখা উপন্যাস বেস্ট সেলার হয়ে আসছিল প্রতি বছর। তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে ‘ইমাম’, ‘দখল’, ‘দারবিস’, ‘ফ্রন্টলাইনার’, ‘রাখাল’।

আরএমডি