বিনোদন

কোন ছবি সফল, কোনটি ব্যর্থ

কোন ছবি সফল, কোনটি ব্যর্থ

সিনেমার ব্যবসা কেমন হলো? এর যথাযথ হিসাব কেউ দিতে পারবেন না। নিয়মতান্ত্রিক বক্স অফিস ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত সেটা আর হচ্ছে না। ততদিন হিসেব মেলাতে হবে ‘অন্য’ উপায়ে। কী সেই উপায়, যা বলে দেবে কোন ছবির ব্যবসা কেমন হলো? কিংবা কোন ছবি সফল, কোনটি ব্যর্থ!

Advertisement

প্রত্যাশা ও ব্যবসায় এগিয়ে ‘তাণ্ডব’ ঈদুল আজহায় ছয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ‘তাণ্ডব’। যদিও দুসপ্তাহের মাথায় অনলাইনে ফাঁস হয়েছে ছবিটি। বেরিয়ে পড়েছে এইচডি কপি। তারপরও একপর্দা ও মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রদর্শনী পেয়েছে ‘তাণ্ডব’। অনেকগুলো দিক বিবেচনায় বলা যায়, এটিই ছিল এ বছরের ঈদুল আজহার সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা।

ঈদে মাল্টিপ্লেক্সে ২৮টি শো দিয়ে শুরু করে ‘তাণ্ডব’। মুক্তির ১৩তম দিনে শো সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৯। এ ছাড়া ছবিটি একপর্দার হল পেয়েছে ১ শতাধিক। ‘তাণ্ডব’ সিনেমাসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সিনেমাটির ১৩ দিনের আয় ৭ কোটি টাকার বেশি।

শাকিব খানের সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহ ও প্রত্যাশা কিছুটা বেশি থাকে। হলমালিকরাও মনে করেন, এই ছবি বিক্রি করে কিছুটা ব্যবসা করা সম্ভব। এমনকি কিছু মৌসুমী হলও চালু হয় ঈদকে কেন্দ্র করে। তবে এই ঈদে সেসব মৌসুমী ও একপর্দার হলের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। গরমে দীর্ঘ সময় এসব হলে ছবি দেখেছেন কম দর্শক। ফলে প্রত্যাশিত আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন হলমালিক ও প্রযোজক। সার্বিক বিবেচনায় ‘তাণ্ডব’কে বলা যায় ঈদের সফল সিনেমা।

Advertisement

মুনাফা নয়, যেন ভালোবাসাই প্রত্যাশা উৎসবেরশুরুতে ঢাকার মাল্টিপ্লেক্সে ৯টি প্রদর্শনী পেয়েছিল ‘উৎসব’। পরিচালক তানিম নূর সিনেমা মুক্তির আগের দিন জানিয়েছিলেন, দর্শক পছন্দ করলে শো বাড়বে। পরে দেখা গেল, সেটাই হয়েছে। এখন ২৬টি শো চলছে উৎসবের। পরিচালকের দাবি, খুব ভালো চলছে ‘উৎসব’। শিগগিরই একপর্দার হলেও মুক্তি পাবে সিনেমাটি।

তবে টিকিট বিক্রি করে মুনাফা অর্জন সম্ভবত এই সিনেমার লক্ষ্য নয়। বরং ইমোশন বিক্রি করে আস্থা অর্জন করতে চেয়েছেন নির্মাতারা। এই সিনেমায় কাজ করেছেন নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় সব তারকা। প্রদর্শনী কম, টিকিট বিক্রি (নির্মাতাদের দাবি) এখন পর্যন্ত মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ! তবে দর্শকদের বিপুল ভালোবাসা পেয়েছে ‘উৎসব’। ১৬তম দিনে জানানো হয়েছে, প্রায় ২ কোটি ছাড়িয়েছে তাদের সংগ্রহ।

নব্বইয়ের কিশোর-তরুণদের অনেকে আজ যুবক। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছেন তারা। তাদের কথা ভেবে বিদেশে মুক্তি পাচ্ছে ‘উৎসব’। এই ছবিকে সত্যিকারের সফল সিনেমা বললে বেশি বলা হয় না। কারণ, ‍মুনাফা নয়, স্মৃতিকাতর করতে চেয়েছেন নির্মাতারা! হয়তো মুনাফাও আসবে, তবে ভালোবাসাই বেশি জমা হবে তাদের হিসাবের খাতায়।

ইনসাফের সঙ্গে বেইনসাফ‘ইনসাফ’ ছবিটি ব্যবসাসফল, দাবি নির্মাতা সঞ্জয় সমাদ্দারের। মোশাররফ করিম, শরিফুল রাজ, তাসনিয়া ফারিণদের দিয়ে বাণিজ্যিক ঘরাণার একটি সিনেমা বানিয়েছেন নির্মাতা। শেষ পর্যন্ত এই ছবি প্রদর্শনী পেয়েছিল ৮টি। হলসংখ্যা কম হলেও একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, ১৬তম দিনে তাদের আয় ছিল ৯৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

Advertisement

তবে ভাবতে হবে, ইনসাফের মতো সিনেমার সঙ্গে বেইনসাফ করা হলো কি না! কারণ মাল্টিপ্লেক্স ছাড়া মাত্র ৭টি একপর্দার হল পেয়েছে ছবিটি। বলা হয়ে থাকে, বাংলা সিনেমার মূল দর্শক এখনও যান একপর্দার হলে। তাদের সঙ্গেও কি ইনসাফ হলো এটা? তার ওপর মোশাররফ করিমের মতো নন্দিত অভিনেতার কাজকে ছড়িয়ে দেওয়ার যথাযথ উদ্যোগ নির্মাতারা নিয়েছিলেন বলে শোনা যায়নি। এসব বিবেচনায় ‘ইনসাফ’ ছবিকে সাফল্য-ব্যর্থতার মাঝামাঝি রেখে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।

বাঁধনের ছবিতে দর্শক খরা! সাতটি শো দিয়ে মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে শুরু করে ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। এখন মাত্র দুটি শো চলছে মাল্টিপ্লেক্সে। মুক্তির পর থেকে সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ বাড়ছিল। কিন্তু কেন এই বিপর্যয়?

নির্মাতা জানিয়েছেন, সিনেমার ডিসিপি (ডিজিটাল ফাইল) তারা জমা দিয়েছিলেন ঈদের আগের দিন। এ কারণে বেশি শো পায়নি ছবিটি। তবে বেশ ধীরে বেড়েছে দর্শক। জানা গেছে, ২০ লাখ টাকার মতো ব্যবসা করেছে ছবিটি।‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ আজমেরি হক বাঁধনের সিনেমা। সেই বিবেচনায় এই ছবি আরও বেশি প্রচারণা ও দর্শকের কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল। আন্তর্জাতিক মনোযোগ টেনে নেওয়া বাঁধন নিজের দেশে এভাবে পিছিয়ে পড়বেন, তা প্রত্যাশিত নয়। তবে নির্মাতাদের দাবি, সামনে ব্যবসা বাড়বে ছবিটির। কারণ দেশের বাইরে মুক্তির কথা রয়েছে। এই ছবির সাফল্য-ব্যর্থতা বিবেচনার সময় এখনও আসেনি।

ব্যতিক্রম নীলচক্র হতাশ করেছেঈদের দিন ১টি শো দিয়ে শুরু করে আরিফিন শুভর ‘নীলচক্র’। মাঝে ১০টি শো ছিল ঢাকার মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে। গত ২০ জুন শুক্রবার জানা যায়, কেবল ধানমন্ডি স্টার সিনেপ্লেক্সে ১টি শো চালু আছে ছবিটির!

এই ছবির শোয়ের মতো আয়ও হতাশাজনক। ছবির আয় জানতে চাইলে কোনো আশানুরূপ টিকিট বিক্রির কথা শোনা যায়নি। এই ছবিকে ব্যর্থ বললে ভুল হবে না।

অসহায় ‘টগর’দেশের প্রথম সারির পাঁচ মাল্টিপ্লেক্স ও একটি একপর্দার হলে মুক্তি পায় পূজা চেরী ও আদর আজাদ অভিনীত ‘টগর’। মাল্টিপ্লেক্সে ছিল একাধিক প্রদর্শনী। কিন্তু মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহে তিন মাল্টিপ্লেক্সের কোথাও নেই টগর। দর্শক টানতে ব্যর্থ হওয়ায় ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ রেখেছে মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এখন ঢাকার ১টি ও ঢাকার বাইরের দুটি প্রেক্ষাগৃহে চলছে সিনেমাটি।

মুক্তির আগে ‘টগর’ ছবির গান ও টিজার দিয়ে প্রচারণায় বেশ সরব ছিলেন পূজা চেরী, আদর আজাদসহ ছবিসংশ্লিষ্টরা। ছবিটি পরিচালনা করেছেন অলোক হাসান। কিন্তু এই ছবি সাড়া ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। আয় রোজগারের তথ্য তো দূরের কথা, দর্শককে বলতে শোনা যায়নি টগরের নাম। কেবল মাল্টিপ্লেক্স থেকে এক সপ্তাহে তবু ‘টগর’ আয় করেছে ৪ দশমিক ২৬ লাখ টাকা। হয়তো নির্মাণব্যয়ও তুলতে পারবে না অসহায় ‘টগর’। একে ব্যর্থ বললে ভুল হবে না।

সামান্য আশার কথা জানিয়েছেন নির্মাতা। একপর্দার সিনেমা হিসেবে ‘টগর’ আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে ঈদের আবহ চলে গেলে। একপর্দার হল থেকে ‘তাণ্ডব’ নামলে সেখানে জায়গা করে নিতে চেষ্টা করবে ছবিটি।

এমআই/আরএমডি/জিকেএস