কৃষি ও প্রকৃতি

নারিকেল গাছে সার দেবেন যেভাবে

নারিকেল গাছে সার দেবেন যেভাবে

নারিকেল বাংলাদেশের উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বাগানজাতীয় অর্থকরী ফসল। এ গাছের ফল, পাতা, কাণ্ড ও অন্যান্য অংশ বিভিন্নভাবে ব্যবহারযোগ্য এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। নারিকেল শুধু খাবার ও তেলের উৎস হিসেবেই নয়; নির্মাণ, ধর্মীয় ও ওষুধি কাজেও ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে নারিকেল চাষ সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।

Advertisement

সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমি লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জমির ক্রমহ্রাস ও অনিয়ন্ত্রিত চাষাবাদের ফলে নারিকেল উৎপাদনে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে আধুনিক চাষপদ্ধতি, সঠিক জাত নির্বাচন, সার প্রয়োগ, সেচ ও রোগব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করে নারিকেল উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সম্ভব। এ প্রেক্ষাপটে নারিকেল চাষের বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক সার প্রয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। এতে একদিকে যেমন কৃষকের আর্থিক উন্নয়ন হবে; অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

নারিকেল গাছে সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করলে ফলন অনেক বেশি হয় ও গাছ সুস্থ থাকে। নিচে নারিকেল গাছে সার দেওয়ার নিয়ম তুলে ধরা হলো:

সার দেওয়ার সঠিক নিয়ম

সার দেওয়ার সময়, বছরে দুইবার সার দেওয়া উত্তম। জুন-জুলাই (বর্ষার শুরু) এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর (শীতের শুরু)।

Advertisement

পরিমাণ

প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি গাছে বছরে সারের পরিমাণ ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৩২৫ গ্রাম, এমওপি ৬৫০ গ্রাম, গোবর সার ১৫-২০ কেজি।

আরও পড়ুন

যেসব ভুলে বীজ থেকে চারা বের হয় না বর্ষায় বীজ না কলম কোনটা বেছে নেবেন? কীভাবে সার দেবেন

গাছের গোড়ার চারপাশে ১ থেকে ১.৫ মিটার দূরত্বে রিং (বৃত্তাকারে) নালার মতো করে ১৫-২০ সেন্টিমিটার গভীর করে খুড়ুন। সারের পরিমাণ মাটিতে ছিটিয়ে দিন। এরপর মাটি দিয়ে ঢেকে দিন ও হালকা পানি দিন। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে।

অতিরিক্ত যত্ন

৩-৫ বছরের গাছে সার অর্ধেক পরিমাণ দিন। গাছের নিচে আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

Advertisement

নারিকেল গাছের সুস্থ বৃদ্ধি, অধিক ফলন এবং দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে সঠিক মাত্রায় ও নিয়মিত সার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটির ধরন, গাছের বয়স ও পরিবেশভেদে সার প্রয়োগের সময় ও পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে, বছরে দুবার (প্রাক-মৌসুম ও বর্ষা শেষে) সুষম হারে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ গাছকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

নিয়মিত গর্ত পদ্ধতিতে অথবা বৃত্তাকারে গাছের চারপাশে সার প্রয়োগ করলে গাছ সার সহজে গ্রহণ করতে পারে। পানি সেচ ও আগাছা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গেও সার ব্যবস্থাপনা সমন্বিত হলে ফলন আরও বৃদ্ধি পায়। অতএব নারিকেল গাছে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সুষম সার প্রয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব।

এসইউ/এমএস