১৮ দিন তালাবদ্ধ থাকার পর অবশেষে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে অচলাবস্থার অবসান হয়েছে। এর মধ্যে ভবন দখল এবং নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়। চেম্বারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা এ অভিযোগ করেছিলেন।
Advertisement
চেম্বার ভবনে তালা লাগানোর ঘটনার ঠিক আগের দিন ২১ জুন গঠিত হয়েছিল তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এর পরদিন শতাধিক ব্যক্তি চেম্বারে এসে নিজেদের ‘ছাত্র-জনতা’ পরিচয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
তালাবদ্ধ অবস্থায় চেম্বারের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকায় পণ্য রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট অব অরিজিন ইস্যু বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
চেম্বার ভবনে তালা দেওয়ার ঘটনায় মদতদাতা হিসেবে অভিযোগ ওঠে সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান আলী আলাল এবং তার মামা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল বাসারের বিরুদ্ধে।
Advertisement
চেম্বারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তালাকাণ্ড এমনি এমনি ঘটেনি। এর পেছনে রাজনৈতিক অভিলাষ ছিল। নেতৃত্ব শূন্যতার সুযোগ নিয়ে ভিন্ন পক্ষ চেম্বার দখলে নিতে চেয়েছে। তারা নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক ধারাতে আসতে চাননি।
২০১৮ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে মাসুদার রহমান মিলন বিনা ভোটে চেম্বারের সভাপতি হন। গত বছরের আগস্টে মিলন আত্মগোপনে গেলে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়। সে সুযোগে সিনিয়র সদস্য সাইরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নেন এবং জুনে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু নির্বাচন ঘোষণার পরের দিন ভবনে তালা লাগানোর বিষয়টি প্রশ্নের তৈরি করে।
চেম্বারের দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থার অবসানে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেজবাউল করিমকে প্রশাসক নিয়োগ দেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ। তাকে আগামী ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসক মেজবাউল করিম বলেন, ‘আমি ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণে আছি। ফিরে তালা খুলে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবো।’
Advertisement
চেম্বার বন্ধ থাকায় সদস্য নবায়ন বন্ধ, নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি বন্ধ, রপ্তানিকারকদের পণ্য পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। এক ব্যবসায়ী জানান, ৮ হাজার ডলারের পণ্য পাঠাতে পারিনি শুধু ৫০ টাকার সনদ না পাওয়ায়।
আরেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, চেম্বার ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান। কোনো রাজনৈতিক পরিবারের সম্পত্তি না। এখন আবার ছাত্র-জনতার ব্যানারে লাগিয়ে সুবিধাবাদী কিছু ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসান আলী আলাল বলেন, ‘আমি দখল করেছি এটা সত্য নয়। কাউকে পাঠিয়েছি এ তথ্যও মিথ্যা। এখন চেম্বারের স্বচ্ছ নেতৃত্ব আসুক, সেটাই চাই।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা খাইরুল বাসার বলেন, ‘আমার ভাগনে হয়ে চেম্বার দখল করার চেষ্টা করেছি এটা হাস্যকর অভিযোগ। আসলে আমি এসবের কিছুই জানি না।’
ছাত্র-জনতা পরিচয়ে চেম্বারে তালা লাগানো ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সদস্যসচিব সাকিব খান বলন, ‘তাদের সংগঠনের কেউ এ কাজে জড়িত ছিল না।’
এলবি/আরএইচ/এএসএম