ধর্ম

জমজমের পানির দুই বৈশিষ্ট্য

জমজমের পানির দুই বৈশিষ্ট্য

হাদিসে জমজমের পানিকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পানি বলা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জমজম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি। (তাবরানি ফিল মু’জামিল কাবির: ১১১৬৭)

Advertisement

এ হাদিসে নবিজি (সা.) জমজমের পানিকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পানি বলার পাশাপাশি জমজমের পানির দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। এর মধ্যে একটি হলো, জমজমের পনিতে খাবারের বৈশিষ্ট্য আছে। অর্থাৎ জমজমের পানি শুধু পানীয় নয়, বরং খাদ্যের কাজও করে। জমজমের পানি তৃষ্ণার পাশাপাশি ক্ষুধাও নিবারণ করে। শুধু জমজমের পানি খেয়ে মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে।

হজরত আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি যখন ইসলাম ও নবিজির (সা.) নবুয়্যতের সত্যতা যাচাই করতে মক্কায় আসেন, তখন দীর্ঘ ত্রিশ দিন তিনি শুধু জমজমের পানি খেয়েই ছিলেন। ওই সময়ের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আবু জর (রা.) বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদুল হারামে এসে হাজরে আসওয়াদে চুমু খান। এরপর তিনি ও তার সঙ্গী তাওয়াফ করে নামাজ আদায় করেন। নবিজি (সা.) নামাজ শেষ করলে আমি তাকে সালাম দিই।

নবিজি (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, আপনার পরিচয় কী? আমি বললাম, আমি গিফার বংশের লোক।

Advertisement

নবিজি (সা.) জানতে চান আমি কোথায় থাকছি এবং কী খাবার খাচ্ছি। উত্তরে আমি বললাম, জমজম ছাড়া আমার আর কোনো খাবার ছিল না। শুধু এ পানি পান করেই আমি দীর্ঘ ত্রিশ দিন কাটিয়েছি। এমন কি মোটাও হয়ে গেছি। এ দীর্ঘ সময়ে আমি কখনো ক্ষুধা অনুভব করিনি।

নবিজি (সা.) তখন বলেন, এটা বরকতময় পানি। এতে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য আছে।। (সহিহ মুসলিম: ২৪৭৩)

ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, আমি এমন মানুষও দেখেছি, যিনি অর্ধ মাস কিংবা তারও বেশি সময় শুধু জমজমের পানি পান করেই কাটিয়েছেন। কখনো ক্ষুধা অনুভব করেননি। অন্যান্যদের সাথে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাওয়াফ করতেন। তিনি আমায় বলেছেন, একবার তো শুধু জমজমের পানি পান করেই চল্লিশ দিন কাটিয়েছেন। (যাদুল মাআদ: ৪/৩৯৩)

উল্লিখিত হাদিসে জমজমের পানির আরেকটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে সেটি হলো, জমজমের পানি রোগ নিরাময়ের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। জমজমের পানির বরকতে যে কোনো রোগ থেকে আল্লাহ তাআলা মুক্তি দিতে পারেন।

Advertisement

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে উদ্দেশ্যে জমজম পান করা হবে তা পূরণ হয়। যদি তুমি রোগমুক্তির জন্য তা পান কর, আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করে দেবেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১৭৩৯)

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসুস্থ ব্যক্তিদের জমজমের পানি পান করতে দিতেন, অনেক সময় অসুস্থ ব্যক্তিদের ওপর জমজমের পানি ছিটিয়ে দিতেন।

আমরাও নবিজির (সা.) সুন্নত অনুযায়ী যে কোনো রোগ থেকে সুস্থতা লাভ করার আশায় জমজমের পানি পান করতে পারি, জমজমের পানি শরীরের রোগাক্রান্ত স্থানে বা সারা শরীরে ছিটাতে পারি। এ ছাড়া জমজমের পানি শারীরিক ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণের পাশপাশি অন্তরের বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি দিতে পারে, অন্তরে ইমানের নুর বৃদ্ধি করতে পারে আল্লাহ যদি চান।

জমজমের পানি পান করার সময় যে দোয়া পড়বেন

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) জমজমের পানি পান করার সময় এ দোয়া পড়তেন,

اللّهُمَّ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا وَاسِعًا، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ; ওয়া রিযক্বান ওয়াসিআ; ওয়া আমালান সালিহা; ওয়া শিফাআম মিন কুল্লি দায়িন।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, প্রশস্ত রিজিক ও সব রোগ থেকে মুক্তি চাই। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১৭৩৯)

ওএফএফ/এএসএম