জাতীয়

ফুটপাত দখল করে দোকানপাট, ঝুঁকিতে পথচারীরা

ফুটপাত দখল করে দোকানপাট, ঝুঁকিতে পথচারীরা

পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য রাজধানীর সড়কগুলোর গা ঘেঁষে তৈরি হয়েছে ফুটপাত। সেই ফুটপাত এখন অস্থায়ী দোকানি ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দখলে। ফলে ফুটপাত দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না পথচারীরা। ফুটপাতে দোকানপাট দেখে অনেক সময় ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়কে চলাচল করে তারা। এতে একদিকে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, অন্যদিকে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

Advertisement

রাজধানীর মিরপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, নিউমার্কেট, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, বাড্ডা লিংক রোডসহ বেশিরভাগ এলাকার অধিকাংশ ফুটপাতই দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ ফুটপাত দখল করে নানান পণ্যের দোকান সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ফুটপাত ধরে যাতায়াতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়লে ফুটপাত ধরে হাঁটার উপায় না পেয়ে সড়কে নামতে দেখা যায় পথচারীদের। অধিকাংশ ফুটপাতে চায়ের দোকান, জামা-কাপড়সহ জুতা-স্যান্ডেলের দোকান দেখা গেছে। আবার কোথাও কোথাও ফুটপাত রেখে প্রধান সড়কগুলোতেও দোকান সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে অনেককে।

আরও পড়ুন ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল: ডিএনসিসি প্রশাসক ফুটপাত আসলে কার?

পথচারীদের অভিযোগ, এসব দোকানের কারণে ফুটপাত রেখে ঝুঁকি নিয়ে প্রধান সড়কে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আবার প্রধান সড়কেও অনেক ছোট-বড় দোকান থাকায় সড়কগুলো সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেখানেও হাঁটার সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে তাদের।

Advertisement

ফুটপাত রেখে সড়কে হাঁটছেন কেন- এমন প্রশ্ন করা হলে পথচারী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে কীভাবে হাঁটব? দোকানের জন্য কি আর সে উপায় আছে? বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলাচলের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়।’

শরিফুল ইসলাম নামের এক পথচারী বলেন, ‘ফুটপাত তো হকারদের জন্য, আমাদের জন্য না। যদি আমাদের হতো তাহলে এভাবে দখল করে ব্যবসা করতে পারতো কেউ? আমরা পথচারীরা হাঁটার জায়গা পাই না, আর এরা ফুটপাত দখল করে বসে আছে। এদের কারণে আমরা ফুটপাত রেখে রাস্তায় নামতে বাধ্য হই। আর বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। কোনো সরকারই এগুলো দেখে না। ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করতে কেউই উদ্যোগ নেয় না।’

এদিকে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসার বিষয়ে কথা বলতে নারাজ দখলদার ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয় তাদের। দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক চুক্তিতে চাঁদা দিতে হয় নেতাদের। আর এর বিনিময়ে অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগসহ ফুটপাতে নির্ধারিত স্থানে ব্যবসা করার অনুমতি মেলে।

বিগত সময়গুলোতে ফুটপাত অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে দফায় দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু অভিযান শেষ হতে না হতেই আবারও দোকান সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ফুটপাতগুলো তিনটি জোনে ভাগ করে ব্যবসায়ীদের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও সে প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে।

Advertisement

বর্তমানে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কোন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা হাসিবা খান জাগো নিউজকে বলেন, এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার আগে আমাদের একটা রেগুলার ওয়ার্ক (কাজ) ছিল। আপনারা জানেন, একমাস ধরে অফিসে বিভিন্ন ঝামেলার কারণে বন্ধ ছিল। আমরা কাজগুলোও ঠিকমতো করতে পারিনি। এখন আবার অফিস স্বাভাবিক হয়েছে। আমরা আবার আমাদের কাজগুলো শুরু করব।

তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। আমাদের এখানে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। তারাই এই কাজগুলো পরিচালনা করেন। তবে হ্যাঁ, গত এক মাসে কাজে গ্যাপ হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী নেতারা এসব অবৈধ দখলদারদের সুযোগ করে দেন। আর আমরা স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে এদের উচ্ছেদ করি। এটা তো আসলে ইঁদুর-বিড়াল খেলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী যেসব নেতা আছেন, তারা এখান থেকে সুবিধা পান। এদের উঠিয়ে দিলেই আবার নেতাদের নাম বলে, যারা তাদের শেল্টার দেন। মানুষ কি এত সাহসী হয়ে গেলো? যদি কোনো গডফাদারের সাপোর্ট না থাকে তাহলে এগুলো করতে পারে? আমি আসলে এদের সঙ্গে পারছি না। স্থানীয় অন্য পলিটিক্যালদের সাপোর্টও নিচ্ছেন তারা। তারপরও আমরা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান করছি। তাদের উঠিয়ে দিচ্ছি।’

কেআর/এএমএ/এমএমএআর/এমএফএ/জিকেএস