অর্থনীতি

‘নতুন বিনিয়োগ আনতে হলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতেই হবে’

‘নতুন বিনিয়োগ আনতে হলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতেই হবে’

ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের বিকাশ ঘটাতে দ্রুত ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে হবে বলে মনে করেন আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচনে সহ-সভাপতি প্রার্থী ও ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকিফ শামীম।

Advertisement

তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগ আনতে হলে ব্যাংক ঋণের সুদ কমাতেই হবে। অন্যথায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। অগ্রাধিকার খাত, বিশেষ করে কৃষি, এসএমই (ছোট ও মাঝারি শিল্প), স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আবাসন, গার্মেন্টস এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে সহজ শর্তের ঋণ পাওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।

আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচন, ব্যাংক ঋণের সুদ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন সাকিফ শামীম।

তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী ৯ শতাংশের কম সুদ বিবেচনায় ঋণ নিয়ে এরই মধ্যে শিল্প স্থাপন করেছেন। কিন্তু এখন সুদ গুনতে হচ্ছে ১৪-১৫ শতাংশ। নীতি সুদহার এভাবে বাড়তে থাকলে আগামীতে ঋণের খরচ আরও বেড়ে সামগ্রিকভাবে সংকট তৈরি হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে বাংলাদেশ। যারা উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, তারা ঋণের ভারে খেলাপি হয়ে পড়বেন। সোজা কথায় বলা চলে, সুদহার বাড়া মানেই ব্যবসায়ীদের গলা টিপে হত্যা করার শামিল।

Advertisement

তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলো কর্তৃক নির্ধারিত সুদের হার অনেক বেশি, যা এই খাতগুলোর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদহার কমানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কৃষি, এসএমই (ছোট ও মাঝারি শিল্প), জ্বালানি এবং স্বাস্থ্যের মতো খাতগুলোতে ঋণের সুদ কমানো জরুরি। এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ খাতগুলোতে সুদের হার বেশি থাকার কারণে ঋণগ্রহীতারা ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। সরকারের উচিত, এ খাতগুলোতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। এতে ঋণ গ্রহণকারীরা সহজে ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিতে পারবেন এবং দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।

কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ নিশ্চিত করা গেলে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসএমই খাত। হাসপাতাল নির্মাণ, ওষুধ উৎপাদন, রোগ নির্ণয়কেন্দ্র, ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠায় ঋণের ওপর উচ্চহারে সুদ নিচ্ছ ব্যাংকগুলো। ফলে এ খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে না, স্বাস্থ্যসেবায় খরচ বেড়ে যাচ্ছ। অথচ স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার।

এসব বাস্তবতায় ব্যাংক ঋণের বিপরীতে উচ্চ সুদহার কমিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন তিনি। সাকিফ শামীম বলেন, উচ্চ সুদের কারণে নতুন বিনিয়োগ না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং একটি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করবেন না। আসন্ন নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে পারলে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Advertisement

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত, বাজারভিত্তিক সুদহার নীতিমালার পাশাপাশি অগ্রাধিকার খাতগুলোর জন্য বিশেষ সুদহার নির্ধারণ করা। এতে এ খাতগুলোতে ঋণ প্রবাহ বাড়বে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সম্প্রতি স্ট্যার্টআপ বিনিয়োগে ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণ পাওয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করে সাকিফ শামীম বলেন, অগ্রাধিকার খাতগুলোর জন্যও এ হার নির্ধারণ করা যেতে পারে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসায় সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের সুদ কমানো হয়েছে। এখন ব্যাংক ঋণের সুদ কমানো প্রয়োজন। স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা এবং এজন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া সুদ ভর্তুকি এবং অন্য প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরি করে অগ্রাধিকার খাত আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর উচিত তাদের পরিচালন ব্যয় কমিয়ে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঋণের সুদহার কমানো। এতে ঋণগ্রহীতারা সহজে ঋণ নিতে পারবেন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবেন। বিশেষ করে কৃষিখাতে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ৫০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম খুবই প্রশংসনীয়। এ ধরনের উদ্যোগ আরও বেশি করে নেওয়া উচিত। সব মিলিয়ে অগ্রাধিকার খাতে ঋণের সুদ কমানো হলে, তা দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করবে।

এমএএস/এএমএ/জেআইএম