জাগো জবস

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার কেমন?

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার কেমন?

বিশ্ব বাণিজ্যের একটি বড় অংশ এখনো সমুদ্রপথে সম্পন্ন হয়। এই বিশাল খাতের প্রাণ হচ্ছে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। সমুদ্রযানগুলোর শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি ব্যবহার এবং যান্ত্রিক রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত তারা। বৈশ্বিক বাণিজ্য, পর্যটন ও নৌপরিবহন শিল্পের প্রসারে এই পেশার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং আসলে কী? এ টেকনোলজির কাজ কী? এ বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে? এ ছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। সেসব নিয়েই আজকের আয়োজন—

Advertisement

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কীআধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পেছনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ও পেশার ভূমিকা আছে; তার মধ্যে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। এ শাখার প্রকৌশলীরা মূলত জাহাজের ইঞ্জিন, প্রপালশন সিস্টেম, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পানি শোধন, বায়ু চলাচল এবং অন্যান্য যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন। এটি এমন এক পেশা; যেখানে প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং সমুদ্রের চ্যালেঞ্জ একত্রে মিলিত হয়।

যেসব বিষয়ে পড়ানো হয়মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি প্রযুক্তি শিক্ষাবিষয়ক শাখা; যেখানে জাহাজ ও সমুদ্রগামী যানবাহনের ইঞ্জিন, যন্ত্রপাতি, শক্তি উৎপাদন, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা বিষয়ে পড়ানো হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানই নয় বরং হাতেকলমে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণও লাভ করেন।

১. যান্ত্রিক প্রকৌশল বিষয়: অ্যাপ্লাইড মেকানিকস; থার্মোডাইনামিক্স; ফ্লুইড মেকানিক্স; উপাদান শক্তি; তাপ ইঞ্জিন ও বয়লার২. বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স বিষয়: বেসিক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং; মেরিন ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম; ইলেকট্রনিক্স ও নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি৩. মেরিন ও জাহাজ সংক্রান্ত বিষয়: মেরিন ইঞ্জিন; সহায়ক যন্ত্রপাতি; জাহাজ নির্মাণ ও নকশা; প্রপালশন সিস্টেম; জাহাজের ভারসাম্য ও ভাসমান ক্ষমতা৪. নিরাপত্তা ও আইন সংক্রান্ত বিষয়: অগ্নিনির্বাপণ ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা; মেরিন আইন ও আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি; ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সামাজিক দায়িত্ব।

Advertisement

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভবিষ্যৎ কীবর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০% সামুদ্রিক পথে পরিবাহিত হচ্ছে এবং এই হার ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও সমানতালে বাড়ছে। পাশাপাশি, এ খাতে যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন আধুনিক প্রযুক্তি, যা আরও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা বাণিজ্যিক জাহাজ, কন্টেইনার শিপ, তেলবাহী ট্যাংকার, ক্রুজ শিপ, নৌবাহিনী কিংবা গবেষণা জাহাজ—বিভিন্ন ধরণের জলযানে কাজ করার সুযোগ পান। এ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। যদি কারো দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এ পেশায় খুব সহজেই উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।

আরও পড়ুন বিশ্বের চারজনের একজন বাংলাদেশের মীম  দ্রুত সফলতার কোনো শর্টকাট নেই: সিহাব সাদমান 

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের কর্মসংস্থানমেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং একটি চাহিদাসম্পন্ন ও বহুমুখী পেশা, যেখানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা কেবল সমুদ্রপথেই সীমাবদ্ধ নন বরং স্থলভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও কাজের সুযোগ পান। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ আছে।

সরকারি চাকরি১. বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন২. চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ৩. নৌপরিবহন অধিদপ্তর৪. বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)৫. বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।

বেসরকারি চাকরি১. আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানি২. দেশীয় বেসরকারি শিপিং ও শিল্প প্রতিষ্ঠান৩. অফশোর তেল ও গ্যাস খাত৪. শিপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ড।

Advertisement

অন্য ক্যারিয়ারপ্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি মেরিন একাডেমি ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতার মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কারিগরি ট্রেনিং সেন্টারেও চাকরি করতে পারবেন। বিভিন্ন সমুদ্রবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডেও ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।

কারা পড়বেন?যাদের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে ভালো জ্ঞান আছে। যারা মেশিন, ইঞ্জিন, জাহাজের প্রযুক্তি ও ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং একটি আদর্শ পছন্দ। সাগরের বুকে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন, যাদের হৃদয়ে থাকে অজানাকে জানার তৃষ্ণা; তাদের জন্য এ টেকনোলজি।

কোথায় পড়বেন?যদি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পড়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন মেরিন একাডেমি ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। ডিপ্লোমা শেষে সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিএসসি করা যাবে।

এসইউ/জিকেএস