নারীদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার অন্যতম হাতিয়ার হেবা ও দানপত্র দলিলের অপব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নারীরা উত্তরাধিকারসূত্রে পৈতৃক সম্পত্তির ন্যায্য অংশ থেকে পরিকল্পিতভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বঞ্চনার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে হেবা ও দানপত্র দলিলের অপব্যবহার।
বর্তমানে বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বয়স্ক পিতা-মাতা, যারা তাদের শেষ জীবনে ছেলেদের আশ্রয়ে থাকেন, তাদের ওপর মানসিক এবং সামাজিক চাপ প্রয়োগ করে সম্পত্তি হেবা বা দানপত্র দলিল আকারে ছেলেদের নামে লিখে নিতে বাধ্য করা হয়।
এ দলিলগুলো আইনত বৈধ দেখালেও বাস্তবতা হলো, অনেক সময় এ দলিলগুলোর পেছনে থাকে ছেলে ও ছেলেদের স্ত্রীদের ব্যাপক চাপ, নির্ভরতার সুযোগ গ্রহণ, প্রতারণামূলক প্রতিশ্রুতি কিংবা ভয়ভীতি।
Advertisement
ফলে ওইসব মা-বাবা তাদের মেয়েদের সম্পূর্ণ বঞ্চিত করে ছেলেদের কে একতরফাভাবে সম্পত্তির মালিকানা দিয়ে দেন, যা ইসলামী উত্তরাধিকার নীতিমালা ও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবিচার।
এ প্রেক্ষাপটে রোববার (২০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন, যেখানে তিনি এ জাতীয় হেবা ও দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রির আগে একটি বাধ্যতামূলক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
ওই নোটিশটি রেজিস্ট্রি ডাক ও ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমানে হেবা ও দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রির সময় রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রাররা কোনো যাচাই করেন না যে দাতার ইচ্ছা স্বাধীন কিনা, তিনি মানসিকভাবে সুস্থ ও সচেতন কিনা, বা তিনি তার সব উত্তরাধিকারীদের ব্যাপারে সচেতন কিনা। এমনকি দলিলের ফলে কন্যাসন্তান বা নারী উত্তরাধিকারীরা সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হয় না।
Advertisement
নোটিশে দাবি করা হয়েছে, সরকার যেন অবিলম্বে একটি বিধান প্রণয়ন করে যাতে রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে দাতার উপস্থিতিতে একটি স্বাধীন যাচাই কমিটি (যেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং আইন সহায়তা প্রতিনিধিরা থাকতে পারেন) নিশ্চিত করেন যে হেবা বা দানপত্র দলিল সম্পূর্ণভাবে ইচ্ছাকৃত, বাধাহীন এবং নারীদের বঞ্চিত না করে সম্পাদিত হয়েছে।
আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, ‘এ সমাজে মেয়েরা আজও তাদের প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, কারণ আইন যেভাবে লেখা হয়েছে তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। হেবা ও দানপত্র দলিল অনেক সময় বৈধতার আড়ালে একতরফা স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামে স্পষ্টভাবে উত্তরাধিকার বণ্টনের ন্যায়নীতি নির্ধারিত আছে। কেউ স্বেচ্ছায় সম্পত্তি হেবা করলেও সেটি যদি অন্য উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে, তবে তা ন্যায়বিচার পরিপন্থি। এই কারণে ইসলামী মূল্যবোধ, মানবাধিকার এবং সংবিধানের সমতা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইন সংস্কার জরুরি।’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, যদি ১০ (দশ) দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হবে।
এ উদ্যোগ শুধু নারীদের পৈতৃক অধিকার রক্ষার প্রয়াস নয়, বরং এটি বাংলাদেশের আইনি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবেও বিবেচিত হওয়া উচিত বলে অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান দাবি করেন।
এফএইচ/এমএএইচ/