চার দশক ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরের কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
একই সঙ্গে বিমানবন্দরটি চালু করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার (২০ জুলাই) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একটি বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির ও মহিউদ্দিন হানিফ।
গত ২ জুন বিমানবন্দরটি চালুর দাবিতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান। বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে নোটিশ পাঠান তিনি। অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামানের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায়।
Advertisement
অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এই বিমাবন্দরটি চালুর কথা ফলাও করে প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। দৃশ্যমান বা বাস্তব কোনও পদক্ষেপও নেয়নি। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু না করার একটি গোপনীয় কৌশলগত কারণ রয়েছে। সেটি হলো— আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের অদৃশ্য হস্তক্ষেপ। এই কারণে কোনও সরকারই বিমানবন্দরটি চালু করতে পারেনি। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি ভারতের ‘চিকেননেক’ এর খুবই সন্নিকটে অবস্থিত এবং ভৌগোলিক কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু হলে এই এলাকায় ভারতীয় আধিপত্যের অবসান হবে। এই বিমানবন্দরটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কার্যকারণ রয়েছে।
এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হলেও বিমানবন্দরটি চালু করা একান্ত প্রয়োজন। ১৯৪০ সালে ব্রিটিশরা যখন এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে, তখন এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। বর্তমানে এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহার করার আবশ্যকতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যাত্রীর অভাবে বিমানবন্দরটি বন্ধ আছে বলে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ যুক্তি সঠিক নয়। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে বিমানযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সৈয়দপুর বিমাবন্দরের বেশিরভাগ যাত্রী ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের। প্রতিদিন ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় থেকে প্রায় ৯০-১০০ জন যাত্রী বিমানে যাতায়াত করেন। ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর প্রায় ১০০ কিমি দূরে, যেতে প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা সময় লাগে, সৈয়দপুর হয়ে বিমানে ঢাকায় যাওয়ার যেই সময়, খরচ ও কষ্ট হয় তাতে রেলওয়েতে যাওয়া অনেক সহজসাধ্য।
বর্তমানে হাজার হাজার ক্ষুদ্রশিল্প উদ্যোগ গড়ে উঠেছে। এই বিমানবন্দরটি ঠাকুরগাঁও সদর, রুহিয়া, শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গি, হরিপুর, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুর ও নীলফামারীর কিছু এলাকার প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে। বিমানবন্দরটির অভাবে এই এলাকায় ভারী শিল্প, কল-কারখানা গড়ে উঠছে না, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না, ৪৫ লাখ মানুষের ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না।
Advertisement
এফএইচ/এমএএইচ/