খেলাধুলা

বেলালের টিকিট দিয়েই ৭৯’র বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল-ফাইনাল দেখেছি: ববি

বেলালের টিকিট দিয়েই ৭৯’র বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল-ফাইনাল দেখেছি: ববি

আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির চেয়ে বয়সে দু’এক বছর বড় হবেন সদ্য প্রয়াত জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মীর বেলায়েত হোসেন বেলাল। তবে চলতেন বন্ধুর মতো, সম্বোধনও করতেন ‘বন্ধু’ বলেই।

Advertisement

সেই বন্ধু চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আর ফিরবেন না কখনো। বন্ধু ও দীর্ঘদিনের সঙ্গী বেলালকে নিয়ে অন্তঃপ্রাণ ক্রিকেট সংগঠক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির স্মৃতিচারণটা তাই একটু ভিন্ন রকমের। ববির কথা, ‘আমার সাথে ক্রিকেটার বেলালের ছিল নিবিড় সম্পর্ক। দারুণ দারুণ সব গল্প আছে আমাদের। সে খেতে খুব পছন্দ করতো। প্রায় বলতো দোস্ত চলো খেয়ে আসি। আমি দুটি ঘটনা বলবো তার। যার মধ্যে ফুটে উঠবে তার বন্ধুসুলভ মানসিকতা, বিনয় ও সৌজন্যতাবোধ।’ ববির প্রথম গল্পটা এমন, ‘১৯৭৯ সালে প্রথম আইসিসি ট্রফির সময়কার ঘটনা। বাংলাদেশ যখন প্রথম আইসিসি ট্রফি খেলতে ইংল্যান্ড গিয়েছিল। আমি তখন লন্ডনে পড়াশোনা করি। মা আমার জন্য দুই বোতল আচার পাঠিয়েছিলেন বেলালের কাছে। বেলাল সেটা পরম যত্ন করে তার ট্রাভেল ব্যাগে করে নিয়ে যায়। দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের পর যখন আমার রুমে গিয়ে ওই ট্রাভেল ব্যাগ খোলা হয়, তখন দেখি আচারের বোতল থেকে তেল চুইয়ে চুইয়ে পড়ে বেলালের ট্রলি ব্যাগের সব কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তার পরনের কাপড়ই না, উইকেটকিপিং গ্লাভসটাও তেলে ভিজে একাকার। আমিতে লজ্জায় লাল। অথচ বেলাল এত বিনয়ী ছেলে যে একটি কথাও বলেনি তা নিয়ে।’

পরের ববি আরও বলেন, ‘আরও একটি ঘটনার কথা বলবো। যা আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। বেলালের বদান্যতায় আমার সুযোগ হয়েছিল ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ মাঠে বসে দেখার। তখন আইসিসি ট্রফির আসর ইংল্যান্ডেই বসতো। আর আইসিসি ট্রফি অনুষ্ঠিত হতো ঠিক বিশ্বকাপের আগে। যেহেতু বেলাল বাংলাদেশের হয়ে আইসিসি ট্রফি খেলতে গিয়েছিল, বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় হিসেবে সে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালের টিকিট পেয়েছিল।’

‘দেশে ফেরার আগে সে (বেলাল) আমাকে বললো, দোস্ত আমি তো থাকবো না। তুমি (ম্যাচ) দেখো। সে আমাকে দুটি টিকিট দিয়ে আসছিল। আমি বেলালের টিকিট দিয়ে ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল দেখেছিলাম লন্ডনের ওভালে। আর ফাইনাল দেখেছিলাম লর্ডসে।’

Advertisement

বেলালের জীবনের শেষদিকের দিনগুলোর কথা উল্লেখ করে ববি বলেন, ‘গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বেশ অসুস্থ ছিল বেলাল। পুরোপুরি শয্যাশয়ী না হলেও সেভাবে হাঁটাচলা করতে পারতো না। আর্থ্রাইটিস ভীষণ ভুুগিয়েছে তাকে। মাঝখানে আবাহনীর একটা প্রোগ্রামে দাওয়াত করেছিলাম। বলেছিলাম গাড়ি পাঠাচ্ছি। আমাকে ফোনে বললো দোস্ত আমি দাঁড়াতেই পারি না। কীভাবে যাবো? আর দেখা হলো না বেলালের সঙ্গে। আফসোস থেকেই যাবে। পরপারে ভালো থেকে দোস্ত।’

এআরবি/এমএইচ/জিকেএস