সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আরাফাত মিয়া এবং আরিফ মিয়া খেলা দেখতে এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। মুখের একপাশে বাঘের প্রতিকৃতি আাঁকা। গায়ে বাংলাদেশ দলের জার্সি। এ দু’জনের সঙ্গী আরও দু’জন। তারাও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। চারজনেরই হাতে বড় একটি প্ল্যাকার্ড-মিস ইউ সাকিব-৭৫, কাম ব্যাক ইন এশিয়া কাপ।
Advertisement
পাশেই আরেকজন প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে। লিখে এনেছে, ‘আজো প্রতিরাত জেগে থাকি তোমারই আশায়। বস তুমি কবে ফিরে আসবে জাতীয় দলে, চার-ছয়ের অপেক্ষায়।’ এখান বস বলতে যে ছেলেটি সাকিব আল হাসানকে বুঝিয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।
সৌদি প্রবাসী আরাফাত মিয়া বললেন, ‘সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ দলের গর্ব। তাকে দিয়েই তো বাংলাদেশকে চিনেছে অনেক দেশ। তার অপেক্ষায় আমরা। আশা করি, খুব দ্রুতই ফিরে আসবেন সাকিব আল হাসান।’
স্টেডিয়ামে ২ নাম্বার গেটের সামনেই দেখা গেলো এসব সাকিবভক্তকে। সামনে এগিয়ে তিন, চার কিংবা পাঁচ নম্বর গেটের দিকে যত যাচ্ছিলাম, তত ভিড় বাড়ছিল। হাজার হাজার সমর্থক এসেছেন বাংলাদেশ-পাকিস্তান তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি দেখতে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শককে দেখা গেলো সাকিব আল হাসানের নামে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ঘুরছে।
Advertisement
মিরপুর-২ এর মোড় থেকে স্টেডিয়ামের চার নম্বর গেটের দিকে এগুতেই দেখা গেলো অভিনব এক দৃশ্য। ফুটপাথের ওপর এক ব্যক্তি বড় বড় সাদা কাগজে লাল এবং সবুজ কালিতে লিখে দিচ্ছেন নানান ধরনের স্লোগান। অধিকাংশই 'মিস ইউ সাকিব আল হাসান'।
একটু দূর অন্তর বেশ কয়েকজনকে দেখা গেলো একইভাবে প্ল্যাকার্ড লিখে বিক্রি করছেন। তারা আবার ক্রেতার চাহিদা অনুসারেও লিখে দিচ্ছেন। প্রতিটি প্ল্যাকার্ডের মূল্য ১০০ টাকা। কোনো কম নেই। সিরিয়াল ধরে কিনছেন অনেক সমর্থক।
সাকিব আল হাসানের নামের প্ল্যাকার্ডই চলছে বেশি। মোহাম্মদ রুবেল নামে একজন প্ল্যাকার্ড রাইটার (লেখক) এই প্রতিবেদককে জানালেন, ভালোই বিক্রি হচ্ছে এসব প্ল্যাকার্ড। যা বিক্রি হচ্ছে তার ৮০ ভাগই সাকিব আল হাসানের নামে।
মোহাম্মদ শাহীন নামে একজন প্ল্যাকার্ড বিক্রেতাও জানালেন, ‘দর্শকদের অনেকেই এসব প্ল্যাকার্ড কিনছেন। ১০০ টাকা করে বিক্রি করছি। তবে ৫০ টাকা, ৭০ টাকা বললেও দিয়ে দিচ্ছি। অধিকাংশই সাকিব আল হাসানের নামের প্ল্যাকার্ড বিক্রি হচ্ছে।’ একই তথ্য জানালেন মুসলেম নামে আরও একজন প্ল্যাকার্ড বিক্রেতা।
Advertisement
রিফাত ও জামালউদ্দিন নামে মিরপুরেরই দুইজন ছাত্র ১০০ টাকা দিয়ে কিনে নিলো সাকিব আল হাসানের নামে একটি প্ল্যাকার্ড। সাকিব আল হাসান নেই, তবুও কেন ১০০ টাকা দিয়ে এই প্ল্যাকার্ড কিনলো? তারা জানালো, ‘সাকিব আল হাসান না থাকলেও বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করি। সাকিব মাঠে না থাকলেও আমাদের হৃদয়ে আছেন। তাকে ভালোবাসি। এ কারণে, তার নামের প্ল্যাকার্ড কিনলাম।’
তবে সাকিব আল হাসানের নামে যত প্ল্যাকার্ডই বিক্রি হোক না কেন, দর্শকরা কিন্তু সে সব প্ল্যাকার্ড নিয়ে গ্যালারিতে প্রবেশ করতে পারেননি। কারণ, প্রবেশ পথেই সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা দর্শকদের কাছ থেকে সে সব প্ল্যাকার্ড রেখে দিয়েছিল। কোনো কোনোটাকে ছিড়ে ফেলতেও দেখা গেছে।
কেন সাকিবের নামে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না? ২ নাম্বার গেটে জানতে চেয়েছিলাম দায়িত্বরত একজনের কাছে। তিনি বললেন, ‘আমাদের কাছে নিষেধ আছে, সাকিবের নামে কোনো প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে যেন কেউ মাঠে প্রবেশ করতে না পারে।’
কেন এমন নিষেধাজ্ঞা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২৪ এর জুলাই আন্দোলনের সময় দেশে যখন ছাত্র-জনতা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিচ্ছিল, তখন পুরোপুরি চুপ ছিলেন সাকিব আল হাসান। তিনি তখন লং ট্রিপ দিচ্ছিলেন, ফেসবুকে সেই ছবি দিয়ে জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে তামাশা করেছিলেন। এখন কেন তাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা?’
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে আসা একজনের তেমনই একটি প্ল্যাকার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তিনি জানালেন, ‘শুধু প্ল্যাকার্ডই নয়, আমরা দুই গালে এসএইচ এবং ৭৫ লিখে এনেছি। প্রবেশ পথে পানির বোতল দেয়া হয়েছিল এগুলো ধুয়ে ফেলার জন্য।’
আইএইচএস/এমএমআর/জেআইএম