করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ধস
করোনাভাইরাস আতঙ্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বিশ্ব বাজারে এরই মধ্যে পড়ে গেছে তেলের দাম, নিম্নমুখী প্রধান প্রধান সব শেয়ারবাজারও। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের প্রধান তিনটি সূচকেই দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে, লন্ডনের এফটিএসই সূচকের পতন গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে চীনে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বেশি, তারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
চীনে দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনে নতুন করে এক হাজার ৩০০ জনসহ মোট চার হাজার ৫১৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৪৪টি।
চীনা নববর্ষের সময় লাখ লাখ মানুষ ভ্রমণে বের হন, স্বাভাবিকভাবেই পর্যটন ও কেনাবেচার সূচকে বড় উন্নতি ঘটে। এ বছর বাণিজ্যিকভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়েই করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে।
সোমবার ছুটির কারণে এশিয়ার অনেক শেয়ারবাজার বন্ধ ছিল। তবে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে ঠিকই ভাইরাস আতঙ্কের প্রভাব দেখা গেছে, বিশেষ করে ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর শেয়ারে।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে চীন। তারা বেশ কয়েকটি শহরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে, যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, বাসিন্দারা অনেকটা গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। দেশটির বেশ কিছু কোম্পানি কর্মীদের ছুটি বাড়িয়েছে, কেউ কেউ বাড়িতে বসে কাজ করছেন, আবার কেউ ভাইরাসআক্রান্ত এলাকা ভ্রমণ করলে তাকে কর্মস্থলে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা এ পরিস্থিতিকে ২০০২ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। চীনে আট হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, প্রাণ যায় অন্তত ৭৭৪ জনের। সেই সময় সার্সের উৎপত্তিস্থল চীনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি এক লাফে কমে যায় প্রায় দুই শতাংশ।
করোনাভাইরাস এখনও ততটা প্রাণঘাতী না হয়ে উঠলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে এর যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। মুডি’স অ্যানালিটিক্সের বিশ্লেষক রায়ান সুইট বলেন, ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক বাজার অবস্থা, আত্মবিশ্বাস, ভোক্তাব্যয় ও রফতানির মাধ্যমে এশিয়ার অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হবে; তা ছড়িয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।
সোমবার ইউরোপের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের অবনমন ঘটেছে। এদিন জার্মানির ডিএএক্স ও ফ্রান্সের সিএসি ৪০ উভয় সূচকই পড়ে গেছে ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। চীনে বহুল জনপ্রিয় এলভিএমএইচ, কেরিং, ল’রিয়্যাল ও হার্মেসের মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর শেয়ারের দাম গতমাসে রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ধাক্কা এসেছে তাদের ওপরও।
পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বারবেরির ১৬ শতাংশ পণ্য বিক্রি হয় চীনে। সোমবার লন্ডনে তাদের শেয়ারের দাম কমে গেছে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
চীনের ম্যাকাও শহরে ক্যাসিনো ব্যবসা আছে উইন রিসোর্টসের। দরপতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শেয়ারের দরপতন হয়েছে প্রায় আট শতাংশ। একই ব্যবসা করা লাস ভেগাস স্যান্ডসের দরপতন হয়েছে প্রায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
ভাইরাস প্রদুর্ভাবের পর সাংহাই ও হংকংয়ের পার্ক বন্ধ করে দিয়েছে ডিজনি। তাদের দরপতন হয়েছে তিন শতাংশেরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভ্রমণ কোম্পানিগুলোও। তবে, এর মধ্যেই উল্টো পথে হাঁটছে জীবাণুনাশক উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ক্লোরক্স। সবার শেয়ারে দরপতনের দিন এক শতাংশ দাম বেড়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির।
অক্সফোর্ড ইকোনমিস্টের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ টমি উ’র মতে, চীনা অর্থনীতির ওপর এই আঘাত স্বল্পস্থায়ী হতে যাচ্ছে। বছরের প্রথম তিন মাসের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এটি। করোনাভাইরাস সংকটের চেয়ে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভই বেশি ভোগাবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
কেএএ/এসআইএস/পিআর