৩০ হাজার ব্রিটিশকে এখনই চীন ছাড়ার পরামর্শ, চলছে সমালোচনা
চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণে প্রাণহানি বাড়তে থাকায় সেখানে অবস্থানরত ৩০ হাজার ব্রিটিশ নাগরিককে ‘এখনই’ দেশছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। তবে এক্ষেত্রে কোনও সরকারি উদ্যোগ থাকবে না, সবাইকে নিজ উদ্যোগেই চীন ছাড়তে বলা হয়েছে। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
আগে নিজেদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে চীন ছাড়তে বলেছে তারা। তবে করোনাভাইরাসের উৎসস্থল উহান ছাড়া অন্য শহরের বাসিন্দাদের নিজস্ব উদ্যোগে দেশে ফিরতে হবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় আমরা সবসময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। এ কারণে সম্ভব হলে এই মুহূর্তেই তাদের চীন ত্যাগ করার পরামর্শ দিচ্ছি।
তিনি জানান, উহানে আটকে পড়া ৩০০ ব্রিটিশ নাগরিকের মধ্যে দেশে ফিরেছেন ১০০ জন। বাকিদের ফিরিয়ে নিতে আর মাত্র একটিই বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করবে যুক্তরাজ্য।
করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স চীনগামী ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা চলছে বেশ কয়েকটি শহরে। এমন পরিস্থিতিতে ৩০ হাজার ব্রিটিশ কীভাবে চীন ছাড়বেন, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
চীনে যুক্তরাজ্যের দু’টি কোম্পানি বিমান পরিচালনা করে- ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও ভার্জিন আটলান্টিক। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর তারাও সব ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে। ফলে অন্যান্য কোম্পানির বাণিজ্যিক ফ্লাইটেই চীন ছাড়তে হবে ব্রিটিশদের।
তবে এভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারীদের আলাদাভাবে শারীরিক পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না, ফলে সারাদেশে করোনাভাইরাস সহজেই ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত দু’জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। তাদের নিউ ক্যাসলের একটি হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, তাইওয়ান চীনফেরত বিদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেও এই পথ এখনও খোলা রেখেছে যুক্তরাজ্য। দেশটির সরকার জানিয়েছে, তারা লন্ডন বিমানবন্দরে সেবা দিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি টিম নিয়োগ করেছে। এছাড়া, ভাইরাস-উপদ্রুত এলাকা থেকে ফেরা নাগরিকদের অন্তত দুই সপ্তাহ বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার। এদিন প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ জন। ফলে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯২ জন। গতকাল চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৮৮৭ জন। অর্থাৎ দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৪ হাজার ৩২৪ জন।
চীনের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত দুইজন। মঙ্গলবার হংকংয়ে ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রাণ হারান। তিনি কিছুদিন আগেই করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন। এর আগে, গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে মারা যান উহানফেরত আরও একজন।
এদিকে, জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা প্রমোদতরীতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ এই ১০ জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে ২৭৩ জন যাত্রীকে পরীক্ষা করা মাত্র ৩১টি ফলাফলের মধ্যে। প্রমোদতরীটিতে মোট যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৭শ’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪টি দেশে ১৭৬ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৮৯২ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
সূত্র: ডেইলি মেইল, রয়টার্স
কেএএ/এমকেএইচ