করোনার প্রকোপে চীনে আকাশচুম্বী খাবারের দাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪১ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনে খাবারের পাশাপাশি প্রায় প্রয়োজনীয় সব নিত্যপণ্যের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দেশটির আদালত মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দাম বাড়তে থাকায় দেশটির নাগরিকদের পারিবারিক ব্যয়ের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।

সোমবার চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে জানুয়ারিতে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১১ সালের পর গত মাসে দেশটিতে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লড়াইরত চীনে এই মূল্যবৃদ্ধি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে।

তবে চীনা ভোক্তাদের সবচেয়ে বেশি ভোগকৃত খাবার শুকরের মাংসের দাম ব্যাপকহারে বেড়েছে। চীনাদের খাবারের এক তৃতীয়াংশ ব্যয় হয় শুকরের মাংসে। কিন্তু শুকরের ভয়াবহ একটি রোগের কারণে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এর দাম প্রায় আকাশচুম্বী।

এক বছর আগের চেয়ে বর্তমানে শুকরের মাংসের দাম বেড়েছে ১১৬ শতাংশ। একই অবস্থা শাক-সবজিতেও; শাক-সবজির দাম বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ। করোনার প্রকোপে নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে চীনে।

দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্যসেবার পণ্য সামগ্রীতে মানুষের ব্যয় বেড়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া পোশাকের দাম বেড়েছে ০ দশমিক ৬ শতাংশ। পণ্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির পেছেনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে স্বীকার করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে।

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতোমধ্যে চীনের এক ডজনের বেশি শহর অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ১৭১ জন এবং প্রাণ গেছে ৯০৮ জনের।

নতুন চান্দ্রবর্ষের ছুটি শেষে দেশটিতে সোমবার থেকে কোটি কোটি মানুষ কর্মস্থলে ফিরেছেন। এরপরও শত শত কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে পণ্য সামগ্রীর মজুদও একটি ফ্যাক্টর। গত সপ্তাহে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, কতদিন ধরে বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় আটকা থাকতে হবে; সেব্যাপারে পরিষ্কার কোনও তথ্য না থাকায় মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ছুটছেন।

তবে বাজারে অনৈতিক উপায়ে পণ্য কিংবা খাবারের দাম বাড়নোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির আদালত। এমনকি মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলেও সতর্ক করে দেন আদালত।

সবজির দাম স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৬৯২ শতাংশ বাড়িয়ে বিক্রি করায় গত মাসে সাংহাই পৌর কর্তৃপক্ষ সুপারমার্কেটের একটি স্টোরকে ২০ লাখ ইউয়ান জরিমানা করে। এছাড়া একটি বাঁধাকপি দুই মার্কিন ডলারে বিক্রি করায় এক সুপারমার্কেট অপারেটরকে ৫ লাখ ইউয়ান জরিমানা করা হয়।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।