সার্সের সঙ্গে করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক তুলনা ‘বোকামি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৫৯ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

করোনাভাইরাসে প্রতিদিন যেমন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ। অনেক বিশ্লেষকই এটিকে ২০০২-০৩ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) মহামারির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তবে ওই সময়ের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির পার্থক্য অনেক। বিশ্বায়নের কারণে এখনকার অর্থনীতি অনেক বেশি আন্তঃসম্পর্কিত। একটি দেশে কোনও সংকট তৈরি হলে তার প্রভাব পড়তে পারে গোটা বিশ্বেই। রয়েছে ভূরাজনৈতিক প্রভাবও। সেক্ষেত্রে সার্সের সঙ্গে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির তুলনা করাকে ‘বোকামি’ বলে মন্তব্য করেছেন কিছু বিশ্লেষক।

মঙ্গলবার ব্যাংক অব আমেরিকার অর্থনীতিবিদ ইথান হ্যারিস বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, দুভার্গ্যজনকভাবে সার্সের ওই তুলনা এখন আর চলে না। অধিকাংশের মতামতে উঠে এসেছে যে, এখন যা ঘটছে তার জন্য সার্স পর্বটি যুক্তিসঙ্গত ও ঐতিহাসিক হলেও এর তুলনা ত্রুটিপূর্ণ। এটি দরকারি হওয়ার চেয়েও বেশি বিভ্রান্তিকর।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে চীন বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতি হয়ে ওঠাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য। ২০০২ সালে চীনের জিডিপি ছিল বিশ্ব অর্থনীতির মাত্র চার শতাংশ। ২০১৯ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে।

‘২০০০ সালে দিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যেগুলো নিয়ামক হিসেবে কাজ করতো, আজ সেগুলোও বদলে গেছে। ওই সময় প্রবৃদ্ধি নির্ভর করতো বিনিয়োগের ওপর। আজ সেটি খুচরা বিক্রি ও ব্যয় পরিষেবার ওপর পরিচালিত হচ্ছে, যা উৎপাদনশীলতা হ্রাসের ক্ষেত্রে অর্থনীতিকে আরও অরক্ষিত করে তুলেছে। এছাড়া, মধ্যবর্তী বছরগুলোতে চীন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে অনেক বেশি গতিশীল দেশে পরিণত হয়েছে, যার মানে এটি স্বাস্থ্য সংকটের জন্য এখন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।’

তবে হ্যারিসের মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে ২০০০ সালের ওই সময়ের মতো না করে চীন সরকার এবার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছে। এটি নাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও বড় আঘাত আসতে পারত।

ডাটাট্রেক রিসার্চের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস কোলাসও সার্সের সঙ্গে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির তুলনা করতে রাজি নন। তবে তার দৃষ্টিতে পার্থক্যটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গায়। নিকোলাস বলেন, ২০০৩ সালে সার্সের সময়ের সঙ্গে আজকের করোনাভাইরাসের তুলনা অযথাই। ওই সময় ইরাক আক্রমণই ছিল বিনিয়োগকারীদের ওপর আসল প্রভাবক।

তবে করোনাভাইরাস অর্থনীতি কতটা প্রভাব ফেলবে তা এর প্রাদুর্ভাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি বোঝা যাবে না। যদিও ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের আয়ের ওপর ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবের কথা জানিয়েছে।

মঙ্গলবার বিখ্যাত জুতা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আন্ডার আর্মর জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের বিক্রি ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম প্রান্তিকের আয় ঘোষণার সময় অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক জানিয়েছিলেন, তারাও ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

করোনাভাইরাস সংকটে কিছু প্রতিষ্ঠানের আয় দুর্বল হয়ে পড়লেও উল্টো পথে হাঁটছে বিশ্ববাজার। ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই গত মাসের শেষের দিক থেকে ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার। মঙ্গলবারও যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০, ডো জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ও নাসদাকের সূচক নতুন রেকর্ড গড়েছে। তবে মন্দা যাচ্ছে তেলের বাজারে। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউটিআই ও ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবকে তেল ও জ্বালানি শিল্পের ‘ব্ল্যাক সোয়ান’ (অনিশ্চিত ঘটনা বোঝাতে ব্যবহৃত উপমা) বলে মন্তব্য করেছেন নেড ডেভিস রিসার্চের গবেষক ওয়ারেন পাইস। তার মতে, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই তেল ও জ্বালানি বাজারে আরও বড় ধস নামতে পারে। তিনি বলেন, ২০০৩ সালের সার্স প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে তুলনা করে তেলের জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপ নির্ধারণ করা ‘বোকার আদেশ’ হবে। এর বদলে বিনিয়োগকারীদের বাস্তব সূচকগুলোর ওপরই নির্ভর করা উচিত।

সূত্র: সিএনবিসি

কেএএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।