প্রাকৃতিকভাবেই শক্তি হারাবে করোনাভাইরাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চীনের উহানে আবির্ভূত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এইচ১এন১-এর মতো সময়ের ব্যবধানে প্রশমিত হতে পারে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০০৯ সালে মেক্সিকোতে প্রথম শনাক্ত করা এ ভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বের ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে চ্যানেলনিউজএশিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সোয়াইন ফ্লু শূকরের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে পৃথিবীর কয়েকটি দেশে মানব মৃত্যুর কারণ বলে চিহ্নিত এই সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা। মেক্সিকোতে এটি প্রথম দেখা দেয়। এই ভাইরাস মূলত শূকরের শরীরে থাকে। ওই বছর শূকরের মাধ্যমে এটি মানবশরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সোয়াইন ফ্লুর কারণ এইচ১এন১ ভাইরাস।

সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ নোভেনা হাসপাতালের একজন সংক্রমণ রোগবিশেষজ্ঞ লিঅং হোয়ে ন্যাম। তিনিও মনে করে প্রাকৃতিকভাবেই শক্তি হারাবে করোনাভাইরাস। মেক্সিকোর উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, ‌‌‘আপনি যদি এখন আবার মেক্সিকো যান, তাহলে দেখবেন সেই ভাইরাস এখনও রয়েছে কিন্তু আগের মতো প্রাণঘাতী নয়। এর কারণ হলো বছরের পর বছরের ব্যবধানে এটি তার শক্তি গুঁটিয়ে নিয়েছে। কোভিড১৯-এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেবে।’

শুক্রবার এক প্রেস কনফারেন্সে সিঙ্গাপুরের জাতীয় উন্নয়ন মন্ত্রী লরেন্স ওং বলেছেন, ‘এখন এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, কোভিড১৯ (করোনাভাইরাস) সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (সার্স) থেকে ভিন্ন কিন্তু এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সঙ্গে এর সাদৃশ্য রয়েছে।’ তার মতে, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ পদ্ধতি সার্স থেকে ভিন্ন প্রকৃতির তবে এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ পদ্ধতির কাছাকাছি। 

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিসেসের (এনসিআইডি) বরাত দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো খুব কম প্রকাশ পেলেও এটি এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ছোঁয়াচে। এটি সুয়াইন ফ্লুর মতো দ্রুত সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক ক্লারারেন্স ট্যাম। তার মতে, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম। তবে এটি যদি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে বড় একটা জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে এটি (করোনাভাইরাস) ক্রমেই শক্তি হারাবে।

বর্তমান করোনাভাইরাসের উদাহরণ টেনে সিঙ্গাপুরের এই অধ্যাপক বলেন, ‘এ পর্যন্ত ভাইরাসটি সম্পর্কে আমরা যত ডাটা পেয়েছি তাতে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সার্স ভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী নয়। তবে এই ভাইরাসটি দ্রুত এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মানুষের প্রাণ নেয়ার ক্ষেত্রে এটি সার্সকেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে এর শক্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে।’

এ বিষয়ে চ্যানলেনিউজএশিয়া একাধিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে। তারাও একই মত দিয়েছেন।

এদিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। দেশটিতে একদিনে আরও ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৭৫ জনে।

সোমবার হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) হুবেই প্রদেশে আরও ১০০ জন করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী হেনান প্রদেশে তিনজন এবং গুয়াংডং প্রদেশে দু’জন এই রোগে মারা গেছেন।

রোববার চীনের আরও ২ হাজার ৪৮ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটির মূল ভূখণ্ডে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭০ হাজার ৫৪৮ জন। আর বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৩২৬ জনে।

চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৪৪ জন কোভিড-১৯ রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে নভেল করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত ২৮টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।