‘পা’-মর্দন : মেড ইন চায়না
১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। এতে দেখা যাচ্ছে, মাস্ক পরিহিত এক চীনা ব্যক্তি প্রাইভেটকার থেকে নামছেন। তিনি নামার পর এক ব্যক্তির সঙ্গে তার দেখা হয়। ওই ব্যক্তি কার থেকে নামা ব্যক্তির কাছে আসতেই হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু গাড়ির ওই ব্যক্তি হাত না বাড়িয়ে নিজের পা বাড়িয়ে দেন। পরে তারা পায়ের সঙ্গে পা স্পর্শ করে অভিবাদন জানান। এভাবে ওই পথে তার সঙ্গে যত ব্যক্তির দেখা হয়, সবার সঙ্গেই তিনি একইভাবে পা বাড়িয়ে দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। চীনের উহান শহর থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি বলে নেটিজেনরা অভিনব এই অভিবাদনের নাম দিয়েছেন ‘উহান শেক’।
নোবেল করোনাভাইরাসে সৃষ্ট কোভিড১৯ একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা দ্রুত এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে হাত মাধ্যম হিসেবে কাজ কাজ করতে পারে। এ কারণে নাভাইরাস এড়াতে আলিঙ্গন ও কোলাকুলির করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এর বিপরীতে তারা ‘হাই-হ্যালো’ বলতে বলছেন।
তাই করোনার বিষয়ে সচেতন থাকতে বিশেষ এই অভিবাদন চালু করেছেন চীনারা। অনেকে অভিনব এই পদ্ধতিকে স্বাগতম জানিয়েছেন।
একজন এই ভিডিওর ক্যাপশন দিয়েছেন ‘উহান শেক’। তিনি লিখেছেন, ‘চীনারা যেহেতু করমর্দন করতে পারছে না, তাই তারা অন্য পন্থা বের করেছেন। আমি এ ধরনের লোকদের খুবই পছন্দ করি, যারা কি না কঠিন সময়েও নিজেকে খাওয়াতে পারে।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘দারুণ আইডিয়া। এখন আর হ্যান্ডওয়াশের দরকার হবে না।’
একজন কৌতুক করে লিখেছেন, ‘পায়ের এই ক্রীড়া নৈপুণ্যে ব্যাপক মহামারির জন্য প্রস্তুত থাকুন।’
তবে হাতের বদলে পা দিয়ে অভিবাদনের এই পদ্ধতি যে শুধু চীনারাই চর্চা করছেন, তা কিন্তু নয়। চীনের পরই করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে ইরানে। সেখানকার লোকদেরকেও অভিনব পদ্ধতিতে অভিবাদন করতে দেখা গেছে।
যুক্তরাজ্যের ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য সান বলেছে, বিশ্বজুড়ে করোনা আতঙ্কের কারণে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে লজ্জা পেতে হয়েছে খোদ জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলকেও। সোমবার এক অনুষ্ঠানে দেখা যায়, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সিহোফারের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন মার্কেল। তবে চ্যান্সেলরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে নিজের হাত গুটিয়ে রাখেন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাস যেন অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য ডাবল-চেক কিস থেকে বিরত থাকার জন্য দেশবাসীকে পরামর্শ দিয়েছে ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অভিবাদনের জন্য শারীরিক সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে সতর্ক দিয়েছে ইতালি। দেশটির বিশেষ কমিশনার (করোনাভাইরাস) অ্যাঞ্জেলো বরেলি বলেছেন, বরং সংকটাপন্ন এই সময়ে করমর্দন থেকে দূরে থাকাই ভালো হবে।
সোমবার পর্যন্ত সারাবিশ্বে ৩ হাজার ১২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিশ্বের ৭৬টি দেশ ও অঞ্চলে ৯০ হাজার ৯২৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে ৪৮ হাজার মানুষ চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ১৫১ এবং মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯৪৩ জনের। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইরানে।
এসআর/জেআইএম