বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য ইরানকে দুষছে সৌদি
করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার জন্য ইরানকে দায়ী করছে সৌদি আরব। দেশটির দাবি, করোনাভাইরাস ইস্যুতে ইরান যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ফলে বিশ্বব্যাপী এতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে।
এছাড়া সৌদি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সৌদি নাগরিকদের পাসপোর্টে সিল না মেরে দেশে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে ইরান। এ কাজটি করে দেশটি দায়িত্বজ্ঞানহীনের পরিচয় দিয়েছে।
সৌদি সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশটিতে পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে তিনজন বাহরাইন হয়ে ইরান থেকে একসঙ্গে সৌদিতে এসেছেন। বাকি একজন সম্প্রতি কুয়েত থেকে ফিরেছেন। পরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার স্ত্রীও।
ইরান কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এ পর্যন্ত ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে তিন হাজার মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংখ্যা আরও বেশি।
সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনাভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে ইরানের যে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে, এসব দেখলেই তার প্রমাণ মেলে। বিশ্বের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ঝুঁকিতে ফেলছে দেশটি। ইরানের এই আচরণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকি বয়ে আনবে। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক লড়াইকে প্রতিহত করবে।
সম্প্রতি ইরান থেকে ফেরা ব্যক্তিদের জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগযোগ করতে বলেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ইরানে অবস্থানরত নাগরিকদেরকেও দেশে ফিরে আসার পর তাত্ক্ষণিকভাবে ভ্রমণের বিষয়ে জানাতে হবে। দেশে ফিরে আসার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা যদি ইরান ভ্রমণের বিষয়টি জানায়, তাহলে তাদেরকে ভ্রমণ নথি আইনের আওতাভুক্ত করা হবে না বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানে ভ্রমণকারী সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চায় সৌদি সরকার। এছাড়া যারা করোনা আক্রান্ত কোনো দেশে ভ্রমণ করেছে তাদের পরিবারকে সুরক্ষা দিতে বদ্ধ পরিকর সৌদি সরকার।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। এরপর অন্তত ৮০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৫৫২ জন, মারা গেছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ।
চীনের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে অন্তত ৬ হাজার ২৮৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ৪২ জন। মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪৮ জন মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৫৮ জন।
এছাড়া, করোনাভাইরাসের তাণ্ডব চলছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও। দেশটিতে এ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১০৭ জন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা পরিষদের শীর্ষ সদস্য মোহাম্মদ মীর মোহাম্মদী, ভ্যাটিকান সিটিতে ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হাদি খোসরো শাহী, সিরিয়ায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেইন শাইখলইসলাম। আক্রান্ত হয়েছেন দেশটির উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরছিও।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, দেশটির পার্লামেন্টের প্রায় আট শতাংশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত। করোনার কারণে দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং পার্লামেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন শহরে জুমার নামাজও বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে ছাড় পায়নি যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটিতে পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত ১৯টি রাজ্যের দুই শতাধিক মানুষ।
এমএসএইচ/এমএস