জার্মানিতে করোনায় দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১২২৩
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২২৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। সোমবার (৯ মার্চ) দেশটিতে প্রথমবারের মতো এতে আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু হয়। এর আগে রোববার (৮ মার্চ) মিসরে ছুটিতে থাকা এক জার্মান নাগরিকের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম।
দেশটির স্যাক্সনি অ্যানহাল্ট প্রদেশে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ৪ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। ফলে দেশটির ১৬টি প্রদেশেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেল বলে জানিয়েছে সংক্রামক রোগ নির্ণয়ক ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সরকারী প্রতিষ্ঠান রবার্ট কচ ইনস্টিটিউট।
সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে জার্মানির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে। এখন পর্যন্ত এ রাজ্যে ৫২৪ জন করনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এই রাজ্যের একটি এলাকা হাইন্সবেরগে ব্যাপকভাবে সংক্রামিত হয়েছে করোনাভাইরাস। সোমবার মৃত্যু হওয়া দুজন এই এলাকার।
করোনাভাইরাস আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে জার্মানির বেভারিয়া বা বায়ান মিউনিখ প্রদেশ (আক্রান্তের ২৫৬ সংখ্যা জন) এবং তৃতীয় অবস্থানে বাডেমবুটেমবার্গ প্রদেশ (আক্রান্তের সংখ্যা ২৩২ জন)।
করোনার সংক্রামণ ঠেকাতে এরই মধ্যে বার্লিন আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা, লাইফজিক বুক ফেয়ার, হেনভার আন্তর্জাতিক ইন্ডাস্ট্রি ফেয়ারসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট বাতিল করা হয়েছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে জার্মানির সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে।
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পাহন এক হাজার লোক সমাগম হয় এমন সকল ইভেন্ট বাতিল বা আপাতত স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভাইরাসটি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চাপের মধ্যে ফেলবে। সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে জার্মানিব্যাপী প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে সবখানে। করোনা ভাইরাসের কারণে জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশিরাও আতঙ্কে রয়েছেন।
চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৮২৮ জন। বিশ্বের ১০৯টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৫৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৩৬ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৫১৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। দেশটিতে একদিনেই ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬৩ জনে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৭২ জনে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইতালি সরকার। অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ১৬১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২৩৭ জন।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে তিনজন আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। এর মধ্যে দুজন ইতালিফেরত। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এ তিনজনের পরিবারের ৪০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
এমএসএইচ/এমকেএইচ