লকডাউন কলকাতা: খাবারের দুশ্চিন্তায় দুজনের আত্মহত্যা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সর্বাধিক মানুষ এই মুহূর্তে অবরুদ্ধ দশায় সময় পার করছে ভারতে। গত মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণার পর জনমানবশূণ্য হয়ে পড়েছে ভারতের রাস্তাঘাট-হাটবাজার। কিন্তু নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম এক অনিশ্চয়তায়।
ভারতজুড়ে লকডাউন জারি থাকায় পরিবারের সদস্যদের খাবারের দুশ্চিন্তায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন কলকাতার নিম্নআয়ের দুই ব্যক্তি। আত্মহত্যার এই ঘটনা নাড়া দিয়েছে দেশটির সাধারণ মানুষকে। উত্তর কলকাতার ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল)-এর চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে কাজ করতেন ওই দুই ব্যক্তি।
চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সংগঠন কনট্রাক্টর্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন অব বিএসএনএলের এক নেতা বলেন, ‘অনটন এবং এই লকডাউনের সময় অনিশ্চয়তার জেরেই আত্মহত্যা করেছেন ওই দুই কর্মী।’
গত মঙ্গলবার নৈহাটির গরিফায় বিষপান করে আত্মহত্যা করেন ৪৪ বছরের সুজয় ঘোষ। তিনি কলকাতার সন্তোষপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে কাজ করতেন। তার আত্মীয় অপূর্ব ঘোষ। তিনিও বিএসএনএলের চুক্তিভিত্তিক কর্মী।
বিএসএনএলের ওই নেতা বলেন, ‘গত ১৩ মাস ধরে সুজয়-সহ আমরা সবাই অন্যদের মতো প্রত্যেকদিন অফিস যাচ্ছি। পার্থক্য একটাই। অন্যরা মাসের শেষে বেতন পান। আমরা পাচ্ছি না। সুজয়ের দুই সন্তান, প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন বৃদ্ধা মা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনি। একদিকে বেতন পাচ্ছিলেন না। তার ওপর লকডাউন ঘোষণার পর সংসার চলবে কীভাবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন। এসব কারণেই আত্মহত্যা করেছেন সুজয়।
পরের দিন অর্থাৎ বুধবার আত্মহত্যা করেছেন বারাসত হৃদয়পুরের বাসিন্দা অনুকূল রায়। বছর ৪২-এর অনুকূলও প্রায় এক বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বিএসএনএলের চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সংগঠনের যৌথ ফোরামের নেতা অমিতাভ ভট্টাচার্য বলেন, প্রায় ৫ হাজার মানুষ বেতন পাচ্ছেন না। তারা কিন্তু প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। এই মার্চে একটা সুরাহা হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই করোনা আতঙ্ক এবং লকডাউন। তার জেরে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। যারা দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না, তারা বিভিন্ন পথে সামান্য রোজগার করে পরিবার কোনও মতে চালাচ্ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই এই লকডাউন সেই আয়ের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আর সে কারণেই আত্মহত্যা বলে দাবি বিএসএনএল কর্মীদের।
তবে এই দু’জনের আত্মহত্যার কারণ কী তা এখনও জানা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে তারা। আনন্দবাজার।
এসআইএস/জেআইএম