ট্রাম্পের উসকানিতে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাবিরোধী বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০৪ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন রাজ্যের ওপর কড়াকড়ি কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক মানুষ বিধিনিষেধ অমান্য করে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।

পুরো বিশ্ব যখন করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা করতে লকডাউন অথবা অন্য কড়া নিয়মের বেড়াজাল সৃষ্টি করছে; তখন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই সংকটকে লঘু করে এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছেন। তিনি একাধিক রাজ্যের উদ্দেশ্যে জনসাধারণকে বাধ্যতামূলকভাবে বাসায় থাকার নির্দেশ তুলে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। ট্রাম্পের যুক্তি, রাজ্য স্তরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। তাই অর্থনৈতিক কার্যকলাপ আবার শুরু করা উচিত।

আগামী নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প চরম বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তাই তিনি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকির দায় গভর্নরদের কাঁধে চাপিয়ে নিজে অর্থনীতি চাঙ্গা করার কৃতিত্ব দাবি করতে চাইছেন বলে সমালোচকরা অভিযোগ করছেন।

অনেক রাজ্যের গভর্নর অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতিতে কড়াকড়ি তুলে নিতে নারাজ। তাদের মতে, পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক হয়নি। এই অবস্থায় অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা সত্ত্বেও তারা সব বিধিনিষেধ তোলার ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত নন।

খোদ প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে অ্যামেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে মানুষ স্টে অ্যাট হোম নির্দেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ওয়াশিংটন রাজ্যের রাজধানী অলিম্পিয়ায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সমবেত হয়েছেন। সেই রাজ্যের ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর ৫০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

বিক্ষোভের আয়োজকদের আবেদন সত্ত্বেও বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী মাস্ক পরেননি বা মুখ ঢাকার চেষ্টা করেননি।ডেনভার রাজ্যেও শাটডাউনের বিরুদ্ধে অনেক মানুষ রাজপথে যানজট ঘটিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীরা মাস্ক পরে পাল্টা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। টেক্সাস, উইসকনসিন, ওহাইও, মিনেসোটা, ভার্জিনিয়া রাজ্যেও শাটডাউন-বিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে।

এদিকে, সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংকটের ক্ষেত্রে সামান্য উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। নিউইয়র্ক শহরের হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৮ হাজার থেকে কমে প্রায় ১৬ হাজারে নেমে এসেছে। দিনে সাত শতাধিকেরও বেশি মৃত্যুর হার কমে ৫০৭-এ নেমে এসেছে।

গভর্নর অ্যান্ড্রু বলেন, এমন প্রবণতা চলতে থাকলে সংক্রমণের মাত্রা কমার পথে এগোচ্ছে। তার মতে, আপাতত ব্যাপক অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকি আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে এখনই তিনি বিধিনিষেধ শিথিল করতে নারাজ।

সংখ্যার বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সাড়ে সাত লাখেরও বেশি মানুষের সংক্রমণও সাড়ে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ফলে বিপর্যস্ত সেই দেশে এখনই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। দেশজুড়ে করোনার মোকাবিলায় সুসংহত ও জোরালো কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের মতো যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।

তাই বেশিরভাগ গভর্নর আরও পরীক্ষার পক্ষে কথা বলছেন। অনেক জায়গায় সেই অবকাঠামো না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ কোনো রাজ্যে সংক্রমণের হার ১৪ দিন ধরে কমে এলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কড়াকড়ি ধীরে ধীরে তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। শুক্রবার তিনি মিশিগান, মিনেসোটা ও ভার্জিনিয়া রাজ্য লিবারেট বা মুক্ত করার ডাক দিয়েছেন। এই তিনটি রাজ্যেই বিরোধী ডেমোক্র্যাট দল ক্ষমতায় রয়েছে। ডি ডব্লিউ।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।