অক্সফোর্ডের টিকা বানরের দেহে সফল সেপ্টেম্বরে বাজারে আনতে চায় ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:১৫ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২০

অডিও শুনুন

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্বিবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তেরি নভেল করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি বানরের দেহে প্রয়োগে আশাব্যাঞ্জক ফল মিলেছে। ভ্যাকসিন দেয়ার পর বানরের শরীরে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে প্রবেশ করানো হলেও সেটি সংক্রমণ ঘটাতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এদিকে, বানরের দেহে কার্যকর হওয়ায় আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে এই ভ্যাকসিনের ব্যাপক উৎপাদন শুরু করতে চায় ভারত।

মঙ্গলবার বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের দ্য সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া বলছে, ব্রিটেনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে থাকা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরিকৃত করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটির অন্তত ৬ কোটি ডোজ চলতি বছরই উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সিরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদার পুনাওয়ালা বলেছেন, চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিনটি এখনও করোনার ভ্যাকসিন হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। তারপরও বানরের দেহে প্রয়োগে কার্যকর হওয়ায় এবং মানবদেহে পরীক্ষার অগ্রগতিতে সিরাম ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের মনটানা প্রদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের রকি মাউন্টেন ল্যাবরেটরিতে ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রজাতির ছয়টি বানরের দেহে অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়। পরে এই ছয়টি বানরের শরীরে ব্যাপক পরিমাণে নভেল করোনাভাইরাস প্রবেশ করানো হয়। এর ২৮ দিন পরও বানরগুলো একেবারে সুস্থ ছিল।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের সঙ্গে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক ভিনসেন্ট মুনস্টারের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাজনিত নতুন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৩১ লাখের বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছে। এছাড়া প্রাণ কেড়েছে ২ লাখ ১৮ হাজারের বেশি। বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা।

টেলিফোনে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সিরামের প্রধান নির্বাহী পুনাওয়ালা বলেন, অক্সফোর্ডে এক ঝাঁক যোগ্যতাসম্পন্ন এবং বড় মাপের বিজ্ঞানী রয়েছেন...যে কারণে আমরা বলেছি, এটার সঙ্গে আছি এবং আমরা ভ্যাকসিনটির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।

তিনি বলেন, বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে সরকারি বিনিয়োগকারী অথবা ব্যাংকারদের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা নেই। এ জন্য অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য এবং প্রকল্পের পাশাপাশি আমি এটাতে সামান্য ঝুঁকি নিতেই পারি।

বর্তমানে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য বিশ্বের প্রায় একশ প্রকল্প চলমান। বিভিন্ন বায়োটেক কোম্পানি এবং গবেষকরা রাতদিন করোনার ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করে চলছেন। এর মধ্যে প্রায় পাঁচটি ইতোমধ্যে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগও করা হয়েছে; যা ফেস ওয়ান ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হিসেবে পরিচিত।

পুনাওয়ালা বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল শেষ এবং এটি সফল হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন। তবে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা গত সপ্তাহে বলেছেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় ভ্যাকসিনটি কার্যকর কিনা সেটি দেখাই তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে কিনা অথবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সেটি দেখতে হবে।

বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের মালিক ধনকুবের সাইরাস পুনাওয়ালা দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পুনের দুটি প্ল্যান্টে ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মধ্যে ৪০ কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সিরাম।

সিরামের প্রধান নির্বাহী পুনাওয়ালা বলেন, বিদেশে দেয়ার আগে প্রাথমিকভাবে উৎপাদিত ভ্যাকসিনটির বেশিরভাগ অংশ যাবে আমাদের দেশের মানুষের জন্য। তবে ভ্যাকসিনটি কোন দেশ, কখন, কত পরিমাণে পাবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব ভারত সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে সিরাম।

তিনি বলেন, সিরাম ভ্যাকসিনটির মূল্য নির্ধারণ করেছে এক হাজার রুপি। তবে সরকার চাইলে জনগণকে তা বিনামূল্যে দিতে পারে। পুনাওয়ালা বলেন, ভ্যাকসিনের উৎপাদন কার্যক্রমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তবে ভ্যাকসিনটির উৎপাদন ব্যয়ে ভারত সরকার সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুনাওয়ালা।

সিরামের এই প্রধান বলেন, আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে সিরাম প্রত্যেক মাসে ৩০ থেকে ৫০ লাখ ডোজ উৎপাদন করবে। এতে ২০ থেকে ৪০ কোটি রুপি ব্যয় করবে সিরাম। সরকার আমাদের সঙ্গে কিছু ঝুঁকি ও তহবিল ভাগাভাগি করতে পেরে খুশি। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তিতে পৌঁছাইনি।

পুনাওয়ালা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক কোম্পানি কোডাজেনিক্স এবং অস্ট্রিয়ার থেমিসের সঙ্গে কোভিড-১৯ এর আরও দু'টি ভ্যাকসিনের সঙ্গে অংশীদারিত্ব রয়েছে সিরামের। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চতুর্থ একটি ভ্যাকসিনের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর ঘোষণা দেবে সিরাম।

তিনি বলেন, সিরামের নির্বাহী পরিচালনা বোর্ডের গত সপ্তাহের সভায় নতুন একটি কারখানা তৈরির জন্য ৬ বিলিয়ন রুপি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কারখানায় শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হবে।

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস।

এসআইএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।