কোভিড-১৯ রোগীদের প্লাজমা থেরাপি দিচ্ছে ব্রিটেন
ব্রিটেনের একটি প্রথম সারির হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় পরীক্ষামূলকভাবে রক্তের প্লাজমা ব্যবহার করা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। এ পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস রোগে সেরে ওঠা ব্যক্তির কাছ থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে তা দিয়ে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা হয়; যা রোগীকে কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
এটা একেবারে অবশ্য নতুন পদ্ধতি নয়। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। এটা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও কাজ করেছে। তাই ভাইরাসটি থেকে সেরে ওঠা স্বেচ্ছাসেবীদের প্লাজমাদাতা হিসেবে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসা আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন ছাড়াও অনেক দেশ ব্যবহার করছে।
লন্ডনের গাই অ্যান্ড সেন্ট থমাস হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ হিসেবে তারা তথাকথিত ‘কনভ্যালসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’ দেওয়ার মাধ্যমে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিবেন। প্রসঙ্গত, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই হাসপাতালে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।
গাই অ্যান্ড সেন্ট থমাস হাসপাতালের আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. মনু শঙ্কর হরি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ রোগের কোনো প্রমাণিত চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। তবে কনভ্যালসেন্ট প্লাজমা থেরাপি একটি সম্ভাবনাময় চিকিৎসা। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যারা যথেষ্ট অ্যান্টিবডি উৎপাদনে অক্ষম তাদের ক্ষেত্রে এটা বেশ সহায়ক হবে।’
তিনি বলেছেন, ‘প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক এই প্রয়োগের মাধ্যমে এটা বোঝা যাবে যে কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি ব্যাপকহারে ব্যবহার করা যাবে কিনা। যদি তা প্রমাণিত হয় তাহলে পাইকারি হারে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করা হবে, বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা দুর্বল।’
গত বছরের শেষে চীনের উহান থেকে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর করোনাভাইরাস ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তখন থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন ওষুধ ও বায়োটেক কোম্পানি এবং গবেষকরা এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক তৈরি হয়নি।
করোনার প্রকোপ শুরুর পর গত মার্চের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন করোনার চিকিৎসায় নতুন এই পদ্ধতির কথা জানান। নিউরোলজি ও প্যাথলজি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, সম্প্রতি একটি গবেষণা পেয়েছেন, যাতে দেখা গেছে, রোগীরা প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসায় সফল হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ লিপকিন দাবি করেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে গৃহীত প্লাজমা দিয়ে তিনজন পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। এটা রক্ত দান করার মতো প্রক্রিয়া নয়। এটি সহজ ও ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত কার্যকর সমাধান হতে চলেছে। এরপর অনেক দেশে তা প্রয়োগ করতে শুরু করে।
এসএ