করোনার চিকিৎসায় তিন ওষুধে সফলতার দাবি হংকংয়ের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:২৮ পিএম, ০৯ মে ২০২০

হংকংয়ের একদল চিকিৎসক করোনার মৃদু উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসায় সফলতা দাবি করেছেন। তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী; যারা মৃদু অসুস্থ তাদের উপসর্গ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যদি তিনটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা যায় তাহলে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তবে এই চিকিৎসাপদ্ধতি আরও বড় পরিসরে পরীক্ষা চালানো দরকার বলে জানিয়েছেন তারা। যদি হংকংয়ের গবেষকদের এই দাবি সত্য হয় তাহলে করোনার চিকিৎসার একটি সফল পদ্ধতি হতে পারে সেটি। শুক্রবার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে হংকংয়ের গবেষকরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বর্তমানে করোনার চিকিৎসার তেমন কোনও নির্ধারিত ওষুধ কিংবা ভ্যাকসিন নেই। তবে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রেমডিসিভির ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এই ওষুধটি প্রয়োগে করোনা রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের এক গবেষণায় জানানোর পর বিভিন্ন দেশ রেমডিসিভির ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু ওষুধটির সরবরাহ সীমিত।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. কিওক-ইয়ুং ইউয়েন ও সহকর্মীরা এইচআইভির চিকিৎসায় ব্যবহৃত লোপিনাভির-রিটোনাভির, ইন্টারফেরন বিটা-১বি ইনজেকশনের সঙ্গে হেপাটাইটিসের ওষুধ রিবাভিরিন করোনা রোগীদের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছিলেন।

গবেষকরা হংকংয়ের ৬টি হাসপাতালের ১২৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক কোভিড-১৯ রোগীকে এই পরীক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে বেছে নেন। তারা বলেছেন, এই কার্যক্রমে অংশ নেয়া সব রোগীর শরীরে করোনার হালকা থেকে মাঝারি ধরনের লক্ষণ ছিল; তাদের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার সাতদিনের মধ্যে এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়।

গবেষকরা বলছেন, সংক্রমিত রোগীদের আরও আগে এই চিকিৎসা শুরু করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। ডা. ইয়ুংয়ের নেতৃত্বাধীন চিকিৎসকদল কিছু রোগীকে শুধুমাত্র এইচআইভির ওষুধ দিয়েছিলেন; হংকংয়ে যা কালেট্রা ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি হয়। এছাড়া অন্য রোগীদের বিক্ষিপ্তভাবে লোপিনাভির-রিটোনাভির, ইন্টারফেরন বিটা-১বি ইনজেকশনের সঙ্গে হেপাটাইটিসের ওষুধ রিবাভিরিন দেয়া হয়।

ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে হংকংয়ের এই গবেষকরা বলছেন, যেসব রোগীকে এই তিনটি ওষুধের ককটেল দেয়া হয়েছিল তারা গড়ে সাতদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া যারা শুধুমাত্র এইচআইভির ওষুধ পেয়েছিলেন তারা গড়ে ১২ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়েছে।

পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া খুবই সীমিত

যেসব রোগীকে ককটেল দেয়া হয়, তারা মাত্র চারদিনের মধ্যে শারীরিক অবস্থার উন্নতি অনুভব করেছেন। গবেষকরা লিখেছেন, প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিভাইরাল ককটেল থেরাপি নিরাপদ, লোপিনাভির-রিটোনাভিরের উপসর্গ দ্রুত দূর করে এবং কোভিড-১৯ এর মৃদু উপসর্গের রোগীদের হাসপাতালে থাকার সময় সংক্ষিপ্ত করে।

তবে হালকা কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও রোগীদের মধ্যে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সানফ্রান্সিসকোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডা. পিটার চিন-হং। তিনি বলেন, এই মহামারিতে হংকংয়ের চিকিৎসকদের এই গবেষণা নতুন আশা দেখাচ্ছে।

ডা. পিটার চিন-হং বলেন, এই গবেষণাটি নতুন আশা জাগাচ্ছে। কারণ শুধুমাত্র রেমডিসিভির এই খেলায় জয়ী হওয়া যাবে না। সম্ভবত আমরা আরও একটি উপায় পেতে যাচ্ছি। এই ওষুধগুলোর সুরক্ষার একটি রেকর্ড আছে এবং এগুলো সহজলভ্য।

সূত্র: সিএনএন।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।