লকডাউনে হু হু করে বাড়ছে গর্ভধারণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৫২ পিএম, ০৪ জুন ২০২০

করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের কবলে পড়া দেশগুলোতে অতিরিক্ত গর্ভধারণের তথ্য প্রকাশ করে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। সংস্থাটি বলছে, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অন্তত ৪ কোটি ৭০ লাখ নারী অত্যাধুনিক গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে পারছেন না। যার ফলে আর কয়েক মাসের মধ্যে এসব দেশে অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্বের শিকার হতে হবে আরও অন্তত ৭০ লাখ নারীকে।

বাংলাদেশের প্রতিবেশি ভারতেও এই সমস্যাকেঁকে বসছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।ফলে আগামী বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিপুল চাপ পড়বে ভারতেও। তবে শুধুমাত্র গর্ভনিরোধক ব্যবহার না করতে পারার কারণেই নয় বরং লকডাউনে অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্ব বেড়ে চলার আরও কিছু সমীকরণ আছে বলে জানিয়েছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে লকডাউন শুরু হয়েছে গত ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে; সেই অঙ্ক ধরে এগোলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে শিশু জন্মের হার অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে সদ্য গর্ভধারণ করে চেক আপ করাতে আসা রোগীর অঙ্ক সেই ধারণাকে আরও মজবুত করছে।

পরিবার পরিকল্পনা ও অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্ব, কোনও কিছুকেই যে করোনা-থাবা দাবিয়ে রাখতে পারেনি, তা মেনে নিচ্ছেন ভারতের মুম্বাইয়ের একটি অভিজাত হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌমেন্দু জানা রায়।

তিনি বলেন, মহারাষ্ট্র তথা মুম্বাই করোনা-হানায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তবু এখানে এ বছর লকডাউনের পর থেকে যেভাবে গর্ভধারণের ঘটনা বেড়েছে, তাতে মুম্বাই শহরেই অন্যান্য বারের তুলনায় মনে হচ্ছে সংখ্যাটা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে। এই সময় ফোনে পরামর্শ নেয়া রোগীর সংখ্যা এমনই যে ছুটির দিনেও আমরা ফোন ছাড়ার ফুরসত পাচ্ছি না। প্রায় সকলকেই করোনা ঠেকাতে হাসপাতালে আসতে বারণ করা হচ্ছে। চলছে ফোনেই কাউন্সেলিং ও প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা।

গর্ভধারণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গর্ভপাত

তবে বিষয়টা শুধু আনন্দের মাতৃত্বে আটকে নেই। মুম্বাইয়ের আরেক চিকিৎসক আনন্দ আহুজার বলেন, আকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পাশাপাশি গর্ভপাতের আবেদনও আসছে। অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্বও যে সমান তালে বাড়ছে তা মিথ্যা নয়। বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সৌম্য রায়বসাকের একই মন্তব্য।

তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে হবু মা নিজেই গর্ভপাতের কড়া সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সুতরাং এই মাতৃত্ব যে তার অনাকাঙ্ক্ষিত তা বোঝাই যাচ্ছে।

মুম্বাই-বেঙ্গালুরুর মতো অবস্থা দেশটির আরেক প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গেও। রাজধানী কলকাতায়ও অন্যন্য বারের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক গর্ভধারণ করা রোগী ভিড় করছেন হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সংখ্যা বাড়ছেই। তবে এই সংখ্যার বাড়বাড়ন্ত শুধুই যে আধুনিকমানের গর্ভনিরোধকের অভাবের কারণে, তা সব সময় নয়। বরং এর নেপথ্যে আরও কিছু কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক জটিল রোগীর ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, জটিলতা, সময়ের অভাব। এগুলো কমায় এই লকডাউনে তারা অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে সন্তান ধারণ করতে পারছেন।

গর্ভধারণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ উঠে আসছে বিশেষজ্ঞদের কথায়।

গর্ভরোধকের অভাব: লকডাউন চলাকালীন বাজারে গর্ভনিরোধক ওষুধ ও কনডমের জোগান কম। সেটি এমন অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্ব বাড়িয়ে তোলার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, গর্ভরোধক না থাকায় অবাধ সঙ্গম এমন ঘটনার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।

ক্লান্তি ও টেনশন কম: হাতে অনেক সময়, অফিসের টেনশন কম, ক্লান্তিও নেই। বাড়িতে থাকার সময় বেড়েছে। এই হিসেবে ভর করেও এক শ্রেণির মধ্যে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার বাসনা বেড়েছে বলে মনে করছেন মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। তার কথায়, স্ট্রেস কমলে এমনিতেই শারীরিক সম্পর্ক সুন্দর হয়। নিত্য ব্যস্ততা ও দৈনিক নানা শ্রমের কারণে ক্লান্তি যাতে বাধা দিত, লকডাউনে সেই বাধা সরেছে। ফলে ব্যস্ততা ও শারীরিক দূরত্ব ক্রমে বাড়তে থাকার ঘটনায় মানসিক অসুখ তৈরি হয়ে যাওয়া অনেক রোগীই এই লকডাউনে সন্তানধারণ করতে পেরেছেন। মনের দিক থেকেও অনেক সুস্থ তারা।

আবার উল্টো ঘটনাও আছে। নেহাতই হাতে সময় বেশি বলে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে এবং হাতের কাছে গর্ভনিরোধক না পেয়ে অনেকেই ‘দুর্ঘটনাবশত’ গর্ভবতী হয়ে পড়ছেন। তখন আবার সেই ভ্রূণ গ্রহণ না করার চাপও তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে অনেক সুস্থ মানুষ আবার মানসিক রোগের শিকার হচ্ছেন।

শারীরিক সম্পর্কই হয়ে উঠছে উদ্বেগ কমানোর মন্ত্র: করোনা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কাজকর্মে অনিশ্চয়তা, এসব কিছু থেকে এক চূড়ান্ত উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। বাইরে বেরিয়ে আগের জীবনযাপন না করতে পারার হতাশাও আছে। সব মিলিয়ে সেই হতাশা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে শারীরিক সম্পর্কই বেছে নিচ্ছেন অনেকে। এমনিতেই শারীরিক সম্পর্ক বা সুস্থ যৌনতায় ফিল গুড হরমোন ক্ষরিত হয়। ফলে সাময়িক দুশ্চিন্তা কমে। এটাও লকডাউনে গর্ভধারণ বেড়ে যাওয়ার কারণ। আনন্দবাজার।

এসআইএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।