করোনা বিস্তারে প্রি-সিম্পটমেটিক এবং অ্যাসিম্পটমেটিকের ভূমিকা কী?
অনেক কারণে নভেল করোনাভাইরাস উদ্ভট এক ধন্দ তৈরি করেছে। ফলে এর বিস্তার ছড়ানোর বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিশ্চিত অর্থাৎ বিষয়টি নিয়ে কোনো পূর্বানুমান করা যাচ্ছে না। আর এ কারণে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণে আনাও হয়ে গেছে বড় কঠিন কাজ। তবে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু বিষয় কাজ করে।
এক্ষেত্রে প্রি-সিম্পটমেটিক এবং অ্যাসিম্পটমেটিক বিষয়টি রয়েছে। ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর উপসর্গগুলো প্রকাশিত হওয়ার মাঝের সময়কালটিকে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড। সর্বনিম্ন ৪ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত এ সময়টি হলো প্রি-সিম্পটমেটিক পিরিয়ড বা লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার আগের সময়কাল।
প্রি-সিম্পটমেটিক ট্রান্সমিশন বলতে বোঝানো হচ্ছে, ভাইরাসটি এমন কোনো মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে যিনি অসুস্থ হননি কিংবা অসুস্থ হওয়ার কোনো লক্ষণও তার মধ্যে নেই। কিন্তু পরে যেকোনো সময় তার মধ্যে উপসর্গ দেখা দেবে। আর এই মানুষগুলোর অজান্তেই তাদের দ্বারা অন্য অনেকেই সংক্রমিত হবেন।
অর্থাৎ এই সময়কালে লক্ষণ দেখা না দিলেও এর মানে এটা নয় যে, এই সময়কালে এসব মানুষের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, কারও দেহে কোনো লক্ষণ দেখা যাওয়ার অনেকে আগেই তারা পরীক্ষায় পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মাধ্যমে এর সংক্রমণ ছড়ায়।
দ্বিতীয়ত অ্যাসিম্পটমেটিক ট্রান্সমিশন হলো, এমন কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া যার দেহে রোগটির কোনো লক্ষণ উপস্থিত নেই। এখানে বলা প্রয়োজন, এক্ষেত্রে এসব রোগীর দেহে শুধু আপাতত নয় কখনোই ভাইরাসটির বা রোগটির উপসর্গ দেখা দেবে না। তারাও অপরকে সংক্রমিত করেন।
ফলে উপসর্গহীন মানুষের মাধ্যমে মহামারি নভেল করোনাভাইরাস অপরজনে সংক্রমণের ঘটনা বিরল বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে তথ্য দিয়েছিল তা নাকচ করে একে ভুল ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেছেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ড. অ্যান্থনি স্টিফেন ফাউচি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক অ্যান্থনি ফাউচি বলছেন, ‘আক্রান্তদের ২৫ থেকে ৪৫ শতাংশের মধ্যে তো করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রমাণ রয়েছে। ফলে বিবৃতি (ডব্লিউএইচও- এর বিবৃতি) দিয়ে বিরল বলাটা মোটেও ঠিক নয়, এটা ভুল।’
হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের সদস্য এবং বিশ্বের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ফাউচি বলেন, ‘মহামারি সংক্রান্ত গবেষণা থেকে আমরা এটা জানি যে, কোনো ধরনের উপসর্গ থাক আর না থাক একজন আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা একজন সুস্থ মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে।’
সোমবার ডব্লিউএইচও জানায়, ‘উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ঘটনা বিরল।’ তবে এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা সংশয় প্রকাশ করলে মঙ্গলবার সংস্থাটি তাদের অবস্থানে থেকে সরে এসে বলে, কোনো লক্ষণ নেই—এমন রোগী থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কতটা ছড়ায়, তা এখনো ‘বড় অজানা’ হয়ে রয়েছে।
এসএ