বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ ছাড়াল
বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসে বুধবার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত প্রায় সাত মাসে ভাইরাসটি সাড়ে ৫ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়েছে। এদিকে নতুন করে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, এই ভাইরাসটি বাতাসের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়ায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে যত মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়, মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়েও তিনগুণ বেশি। ভাইরাসটির সংক্রমণ জুন মাসের শেষ ও্ চলতি মাসের শুরুতে দ্রুত বাড়ছেই।
তবে সংক্রমণ বাড়লেও করোনায় বিপর্যস্ত অনেক দেশ ভাইরাসটির বিস্তার রোধে জারি করা লকডাউন সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এদিকে চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে পুনরায় ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আরও কয়েক দফায় লকডাউন জারি করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটির কার্যকর ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত কাজ ও সামাজিক জীবনযাপন পদ্ধতির বিকল্প এই পন্থা চলবে। ইতোমধ্যে দশটির বেশি ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগ করে তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বছরের শেষ নাগাদ কিংবা সামনের বছরের শুরুতে তা পাওয়া যেতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো জানুয়ারির শুরুতে চীনে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত প্রথম কোনো ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর ১৪৯ দিন লেগেছিল ৬০ লাখ মানুষের দেহে তা সংক্রমিত হতে। কিন্তু পরের ৬০ লাখ মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হলো মাত্র ৩৯ দিনে। যা উদ্বেগজনক।
বিশ্বজুড়ে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৫০ হাজারের বেশি, যা প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জায় প্রাণহানির সমপরিমাণ। প্রথমবারের মতো চীনের উহানে করোনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে গত ১০ জানুয়ারি। এরপর ভাইরাসটি ইউরোপে তান্ডব চালিয়ে এখন আমেরিকাকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
গত ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে গোটা বিশ্বে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৫৬ হাজার ৮১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়, ওইদিন বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়েছিল। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি; যা গোটা বিশ্বের মোট আক্রান্তের এক চতুর্থাংশ। মৃত্যুতেও শীর্ষে রয়েছে দেশটি।
এদিকে করোনায় বিপর্যস্ত আরেক দেশ ব্রজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারো বুধবার করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। ব্রাজিলেও প্রায় প্রতিদিন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিকের মতো। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৭ লাখের বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ হাজার মারা গেছে।
বিভিন্ন দেশের সরকারি তথ্যের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, বর্তমানে ভাইরাসটির সবচেয়ে বেশি বিস্তার ঘটছে লাতিন আমেরিকায়। বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তে প্রায় অর্ধেকই দুই আমেরিকায়। জুলাইয়ে যেসব করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এরমধ্যে ৪৫ শতাংশই উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের।
এদিকে বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ নিয়ে ভারতের অবস্থাও নাজেহাল। গতকালও দেশটিতে প্রায় ২৫ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে অনেকে দেশে পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা কম বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছে, সরকারি হিসাবের চেয়ে প্রকৃত মৃত্যু-আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
এসএ/এমকেএইচ