গ্রাম এলাকায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বিগ্ন ভারত
ভারতে মহামারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা দশ লাখের কাছাকাছি ছাড়াও দেশটির জন্য আরেকটি আতঙ্কের খবর হলো গ্রামীন এলাকাগুলোতে ভাইরাসটির বিস্তুার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বেশ কিছু রাজ্য ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে লকডাউন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ পুনর্বহাল করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হচ্ছে, বেশিরভাগ গ্রামীণ এলাকা নিয়ে ভারতের উত্তরের বিহার রাজ্যে বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে লকডাউন জারি করা হয়েছে। ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ভারতে জারি লকডাউন শিথিল হলে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরতে শুরু করলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়।
দেশটির অনেক রাজ্যের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। অনেক স্থানে পাওয়া যাচ্ছে গুচ্ছ সংক্রমণের খবর। তবে দিন দিন দেশটিতে লকডাউন সংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলো আরও শিথিল হচ্ছে। যখন থেকে লকডাউন শিথিল হচ্ছে তখন থেকেই দেশটিতে চলছে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি।
শহরগুলোর মধ্যে রাজধানী দিল্লি ও মুম্বাইয়ের অবস্থা সবচেয়ে বিপর্যস্ত। এই শহরগুলো এখন ভারতে করোনা সংক্রমণের কেন্দ্র। তবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শহরগুলোর স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা পড়েছে ভয়াবহ সংকটে। এর মধ্যে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার গ্রামগুলোতে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বাস্থ্য প্রধান জন ফ্লেমিং এক বিবৃতিতে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বিশ্বের মনোযোগ যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আমেরিকার নিবদ্ধ এখন কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় যুগপত মানবিক বিপর্যয়ের দ্রুতই বিস্তার ঘটছে।’
আন্তর্জাতিক এই দাতব্য সংস্থাটির আঞ্চলিক স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ফ্লেমিং আগামী মাসগুলো ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়ে বলছেন, ‘জরুরিভিত্তিতে আমাদের মনযোগ এই অঞ্চলের দিকে ধাবিত করা প্রয়োজন। তা না হলে এই বিপর্যয় সামলানো সম্ভব হবে না।’
একশ ত্রিশ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ ভারতে করোনার রেকর্ড সংক্রমণ হচ্ছে প্রতিদিন। বিশ্বের শীর্ষ আক্রান্ত দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রাজিলের পরপরই ভারতের অবস্থান। অথচ ভারতে করোনা পরীক্ষার হর বিশ্বে সর্বনিম্ন। এই অঞ্চলের দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও সংক্রমণের হারের লাগাম টানা যাচ্ছে না।
তবে ভারতের সরকার অবশ্য এ নিয়ে গলাবাজি করেই যাচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেছেন, বিশ্বের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দেশ হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের অনেক ভালোভাবে করোনা প্রতিরোধ করছে।’ তিনি এ সময় ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ মৃত্যু ও ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ সুস্থতার হারের উল্লেখ করেন।
এদিকে ভারতের গত ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত একদিনে নতুন করে কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ৬৬৯ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭৬ এবং করোনায় মৃত্যু ২৪ হাজার ৯১৫ জন।
এসএ/জেআইএম