একাত্তরে যুদ্ধজয়ে ‘সোনালি বিজয়বর্ষ’ পালন করবে ভারত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানকে হারিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। টানা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধে বাংলাদেশের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত। যুদ্ধে তাদেরও অনেক সৈন্য হতাহত হয়েছিলেন। একারণে গৌরবোজ্জ্বল সেই বিজয়ের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে গোটা ২০২১ সাল জুড়ে নানা আয়োজন করবে ভারত।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাপ্রধান এমএম নারাভানে এক বক্তব্যে বলেছেন, অনেক প্রবীণ সেনা কর্মকর্তাই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ৫০ বছরপূর্তিকে নাকি তেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। আমি সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, এই বছরজুড়ে আমরা ‘সোনালি বিজয়বর্ষ’ পালন করতে চলেছি। এ উপলক্ষে দেশজুড়ে বিভিন্ন আয়োজন করা হবে।
এসময় ভারতীয় সেনাপ্রধান ঘোষণা দেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ স্মরণে দিল্লিতে অবস্থিত জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। এটি তৈরি হবে যুদ্ধে সাহসিকতা পুরস্কারজয়ীদের গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা মাটি দিয়ে।
এদিন ‘ভেটেরানস ডে’ উপলক্ষে রাখা ওই বক্তব্যে নারাভানে আরও বলেন, গত বছর সবার কাছেই কঠিন চ্যালেঞ্জের ছিল। চ্যালেঞ্জ ছিল সেনাদের জন্যেও। বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও ভারতীয় সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখায় অটল ছিল জানিয়ে তিনি তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে নিশ্চিত হয়েছিল চূড়ান্ত জয়। একারণে দিনটিতে ‘বিজয় দিবস’ উদযাপিত হয় বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশেই। বাংলাদেশের মতো ভারতেও শ্রদ্ধা জানানো হয় যুদ্ধে নিহত শহীদদের।
অবশ্য অনেক ভারতীয়র চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ মাত্র। বিশেষ করে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রকাশনাতে বারবারই বাদ দেয়া হয় বাংলাদেশের নামটা। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে বাংলাদেশিদের মনে।
সবশেষ বিজয় দিবসে সেই বিতর্ক আবারও উসকে দিয়েছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেদিন এক টুইটে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়কে শুধু ভারতের বিজয় উল্লেখ করে তোপের মুখে পড়েন তিনি।
টুইটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয় দিবসে আমরা সশস্ত্র বাহিনীর অবিচল সাহসকে স্মরণ করছি, যা একাত্তরের যুদ্ধে আমাদের জাতির জন্য একটি চূড়ান্ত বিজয় এনে দিয়েছিল।’ ওই টুইটে একবারও বাংলাদেশ বা বাংলাদেশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা উল্লেখ করেনি নরেন্দ্র মোদি।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মতো সেদিন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিরক্ষামন্ত্রীও বাংলাদেশের কথা উল্লেখ না করে বিজয় দিবস নিয়ে টুইট করেন। বাদ যাননি দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীও। তার শুভেচ্ছাবার্তায়ও কোথাও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ ছিল না।
এ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন অনেক বাংলাদেশি। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা উল্লেখ না করে শুধু ভারতীয় সেনাদের সম্মান জানানোয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভারতীয় নেতাদের কড়া সমালোচনা করেন অনেকে।
সূত্র: টাইমস নাউ
কেএএ/জেআইএম