ত্রাণের আগে আফগানদের জব্দ অর্থ ফেরত দেওয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের

গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আফগানিস্তান। এতে এক হাজার একশ মৃতের পাশাপাশি এক হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। ছয় দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পটিতে আফগানিস্তানে এরই মধ্যে মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।
চীন এরই মধ্যে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। তাছাড়া জাতিসংঘের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, তুরস্কসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলো সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ আফগান জনগণের মর্মান্তিক দুর্ভোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাকব সুলিভান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বিবৃতি দিয়ে আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন। তাছাড়া এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
মার্কিনিদের এমন সহানুভূতিকে ভন্ডামি, পরিহাসমূলক ও নিষ্ঠুরতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ দেশটির সব দুর্ভোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রই মূলত দায়ী। কারণ আফগানিস্তানের প্রায় সাতশ কোটি ডলারের সম্পদ এখনো জব্দ করে রেখেছে দেশটি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সাতশ কোটি ডলারে জব্দ করা সম্পদ বিতরণের ঘোষণা দেন বাইডেন। যার অর্ধেক অর্থ ব্যয় করা হবে নাইন ইলেভেনের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে। এর মানে হলো আফগানিস্তানের অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এভাবে বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশটি আফগানদের অর্থ লুট করেছে।
আফগানদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা কিংবা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না মার্কিন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। কিন্তু ভূমিকম্পের পর পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যা আফগানদরে জন্য মায়াকান্নার শামিল।
দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধে আফগানিস্তানকে পঙ্গু করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসময় অন্তত ৩০ হাজার আফগান বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। তাছাড়া এক কোটি দশ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছেন।
এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয়। এরপর হঠাৎ ও অযৌক্তিকভাবে সৈন্য প্রত্যাহার করে দেশটি। এসময় অনেক আফগানকে রেখে যাওয়া হয় ঝুঁকিতে। কাবুলের বিমানবন্দরে দেখা যায় চরম বিশৃঙ্খলা।
ভূমিকম্পের আগে আফগানিস্তানের মানবিক সংকট মোকাবিলায় সাড়ে চারশ কোটি ডলারের ফান্ড চায় জাতিসংঘ, যার ৭০ শতাংশ এখনো মেলেনি। ভূমিকম্পের কারণে সংকট আরও ঘনিভূত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লাখ লাখ আফগান নাগরিক ক্ষুধা ও দরিদ্রতায় ভুগছে।
যুক্তরাষ্ট্র সব সময় মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু তারই আবার আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট তৈরি করে রেখেছে। তারা খুব সুন্দর কথা বলে মায়াকান্না করে। বাস্তবে সমস্যা সমাধানে তারা খুবই উদাসীন। কিন্তু আফগানিস্তানের এমন দুর্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জব্দ করা অর্থ ফেরত দেওয়া।
গ্লোবাল টাইমসের মতামতের আলোকে অনুবাদ করেছেন শাহিন মিয়া
এমএসএম/এএসএম