৭৯ বছর ধরে যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে হাওড়া ব্রিজ

হাওড়া ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে হয় জানেন? আসুন জেনে নেই ৭৯ বছরের পুরোনো এই কেন্টিলেবার হাওড়া ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে। পুরোনো হাওড়া ব্রিজের বর্তমান নাম রবীন্দ্র সেতু। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ‘কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট’র অধীন। হাওড়া ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি ‘আদর্শ অপারেশন পদ্ধতি’ (এসওপি) অনুসরণ করা হয়।
এই ব্রিজটিতে ৭৮টি হ্যাঙ্গার রয়েছে। মূলত এর লোড প্রথমে ডেকের নিচে গ্রিডারগুলোতে স্থানান্তরিত হয়। সেখান থেকে হ্যাঙ্গারগুলো বিভিন্ন জিনিসের ওজনকে ব্রিজের ওভারহেডে স্থানান্তরিত করে।
এই কেন্টিলেবার ব্রিজটির রক্ষণাবেক্ষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভূমিকম্প বা মাটিধসের কারণে সৃষ্ট কম্পন ছাড়াও নির্মাণ সামগ্রীর তাপমাত্রাজনিত সম্প্রসারণ সংকোচনও একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে।
প্রতি শীতকালে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে থাকা একটি দল প্রতিটি জয়েন্টে মরিচা বা কোনো ত্রুটি চিহ্ন আছে কি না তা পরীক্ষা করেন।
রাবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা জয়েন্টগুলোতে ধুলো-ময়লা জমলে এবং বৃষ্টির পানি জমে গেলে গ্রিডারে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে ও ডেকের নিচের বিয়ারিংগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও ব্রিজের সুরক্ষার ক্ষেত্রে এসবের কোনো কিছুর সঙ্গে আপস করা হয় না বলে জানান একজন ইঞ্জিনিয়ার।
যদি কোনো কারণে একটি রাবার পড়ে যায় তবে তা সঙ্গে সঙ্গেই বদলে একটি নতুন রাবার দিয়ে জয়েন্টটি পরিষ্কার করা হয়। এটি বছরে একবার করা হয়।
সেতুর নিচে পানির দিকে ট্রলি থাকে, যা কাঠামোর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যায়। এক হাজার ৫০০ ফুট জুড়ে এই কাঠামো। এক কর্মকর্তা বলেন, যানবাহনের জন্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে একটি লাল পতাকা লাগানো হয়। যদি মরিচা পড়ে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিষ্কার করা হয় এবং আরও ক্ষতি রোধ করার জন্য একটি রঙের আবরণ প্রয়োগ করা হয়।
সেতুর ওপরের কাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি নির্দিষ্ট ইউনিট দায়িত্বে থাকে। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইউনিটটিকে ব্রিজের স্টিলের বারে পাখির বাসা খুঁজে বের করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে জানান এক কর্মকর্তা।
প্রতি সপ্তাহে তাদের মোতায়েন করা হয়। কোনো ত্রুটি আছে কি না বা ব্রিজের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না তারা সেগুলো পরীক্ষা করেন।
ব্রিটিশ-নির্মিত সেতুগুলোর বহনক্ষমতা প্রায় প্রতি দেড় বছরে একবার করে পরীক্ষা করা হতো। ২০০৮-২০০৯ সালে পোর্ট ট্রাস্ট ব্রিজে যানবাহন চলাচলের স্ট্যান্ডার্ড বিটুমেনের বদলে অনেক বেশি টেকসই এবং ব্যয়বহুল ম্যাস্টিক অ্যাসফাল্ট দিয়ে রাস্তা তৈরি করে। দেখা যায় পরের চার বছরে রাস্তার জন্য কোনো বড় রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়নি। সে সময় থেকে, রাস্তায় শুধু ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ব্রিজের ওপর নতুন করে রাস্তা তৈরির সময় পুরোনো আস্তরণ তুলে ফেলারও সুপারিশ করা হয়।
সেতুটি শেষবার ২০২১ সালে নতুন করে রং করা হয়। ১৯৩৬-১৯৪৩ সালে তৈরি হওয়া ৭০৫ মিটার লম্বা ও ৩০ মিটার চওড়া এই রবীন্দ্র সেতু ৮ বছর ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
কীভাবে সঠিক কাঠামো বজায় রাখা যায় সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে। ‘জামশেদপুরের ন্যাশনাল মেটালার্জিক্যাল ল্যাবরেটরি’ ৮০ ফুট গভীরে থাকা চারটি থামের ক্ষয়রোধ করার পরামর্শ দিয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া আইআইটি মাদ্রাজ থেকেও সাহায্য চাওয়া হয়েছিল বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
টিটিএন/জিকেএস